পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে পিলখানায় : অ্যাটর্নি জেনারেল


প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ০৮ নভেম্বর ২০১৫

পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডকে পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রোববার এ মামলায় দায়ের করা সকল (১৫২ জন) আসামির ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের মাঝে বিরতিতে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।  

সকাল ১১টার পরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মামলায় যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। এরপর মধ্যহ্ন বিরতি দিয়ে তা চলে বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত।

বিরতিতে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেছি, এটি পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যকাণ্ড। তার কারণ একজন পিতা এবং সন্তানের যেমন সম্পর্ক থাকে ঠিক এরকম একজন আর্মি অফিসারের সঙ্গে তার যে সৈনিক একই সম্পর্ক থাকে। সেই সম্পর্কটা তারা যেভাবে পদদলিত করেছে, অফিসারদের যেভাবে মৃত্যুর আগে অসন্মান করেছে, তাদের যেভাবে নির্যাতন করেছে, এটি তুলনাহীন। এই হত্যাকাণ্ডের দণ্ডের ব্যাপারে কোনোরকম অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই।’

রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে (বৃহত্তর) বিশেষ বেঞ্চে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

মামলায় প্রথমে ডেথ রেফারেন্স নিয়ে শুনানি করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন- ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল জেনারেল কেএম জাহিদ সারওয়ার কাজল, সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল গাজী মো. মামুনুর রশীদ ও মো. আসাদুজ্জামান।

আসামিপক্ষে ছিলেন- আইনজীবী এসএম শাহজাহান, আমিনুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আইনজীবী সুলতানা আক্তার রুবী, শামীম সরদার ও আইনজীবী জহিরুল আমিন প্রমুখ।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, এতো বড়ো মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষ এবং আমাদেরও অভিজ্ঞতা ছিলো না। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থান শেষ হলে আমরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করবো। আশাকরি আমাদের বক্তব্য উপস্থাপনে প্রয়োজনীয় সময় পাবো।

সবচেয়ে বেশি আসামির সংখ্যা নিয়ে বিচারিক আদালতে থেকে সাজা পাওয়া মামলায় হাইকোর্টে ১৮ জানুয়ারি থেকে শুনানি শুরু হয়ে ১শ’২৪ তম দিনে ১ নভেম্বর শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক উপস্থাপন শেষ করেন। ওইদিন আদালত ৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের দিন ঠিক করেন। রোববার ছিল যুক্তি-তর্ক পেশ এবং শুনানির ১২৫ তম দিন।

বিডিআর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে.এম. জাহিদ সরোয়ার কাজল জানান, ১৫২ আসামির ডেথ রেফারেন্সের ওপর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে। সোমবার যুক্তি উপস্থাপন করা হবে। কার্যতালিকায় ১১৯ আসামির আপিল, জেল আপিল ও ৬৯ আসামিকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলও রয়েছে। এর আগে শুনানিতে ৩৬ খণ্ডের ৩৫ হাজার ১১৩ পৃষ্ঠার পেপারবুক আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

তিনি বলেন, এর আগে একশত ২৪ কার্যদিবসে (মোট তিনশত ৭২ ঘণ্টা) পেপারবুক পড়ে শেষ করেছি। গত ১৮ জানুয়ারি থেকে এ আপিলের শুনানি শুরু হয়। পিলখানা বিডিআর হত্যা মামলার চার ধরনের আপলি হয়েছে। সবগুলো আপিলের শুনানি একসঙ্গে চলে। বাদী পক্ষের ছয়শত ৫৪ জন সাক্ষীদের বক্তব্য ও বিচারিক আদালতে রায় আদালতে উপস্থাপন শেষ হবার মধ্য দিয়ে শেষ হয় পেপারবুক পড়া।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় ৮৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেন বিশেষ জজ আদালত। বন্দি চার জন আসামি মারা গেছেন। বাকি ৮৪৬ জন আসামির মধ্যে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয় ২৫৬ জনের। খালাস পান ২৭৮ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ আসামির মধ্যে ১৪ জন পলাতক।

অন্যদিকে রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এসব আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা ১৪১ জনের পক্ষে জেল আপিল এবং রাষ্ট্রপক্ষে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের বিষয়ে হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়। বাকি সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ১১৪ জন আপিল করেছেন। আর খালাস পাওয়াদের মধ্যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। গত ১৮ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর মামলায় করা আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।

চার-পাঁচ দিনে বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করতে পারে রাষ্ট্রপক্ষ বিরতির সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পিলখানা হত্যা মামলায় ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ হয়। ফাঁসির বিষয়টি এখানে রেফারেন্স মামলা হিসেবে এসেছে। তার সঙ্গে অনেক আসামির আপিলও আছে। অনেক আপিলকারী আছেন, যাদের ফাঁসি হয়নি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অন্যন্য মেয়াদে দণ্ড হয়েছে। এখন ১৫২ জনের ফাঁসির সপক্ষে, ডেথ রেফারেন্সের পক্ষে বলা শুরু করেছি রাষ্ট্রপক্ষে। আশা করি বেশ কয়েকদিনের ভেতর আমার বক্তব্যটা আমি শেষ করতে পারবো। ১৫২ জনের যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে, এদের নানা কারণে দেওয়া হয়েছে। কেউ ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন, কেউ সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন, কেউ অস্ত্র নিয়ে দরবার হলের আশে-পাশে ছিল বা কেউ পিলখানাতে অস্ত্র নিয়ে ঘোরা-ফেরা করেছে বা উৎসাহ দিয়েছে। আবার কেউ লাশ গুম করার সঙ্গে জড়িত ছিল।

মাহবুবে আলম বলেন, ‘আশা করি চার-পাঁচ দিনের মধ্যে আমার বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করতে পারবো। কারণ ১৭ নভেম্বর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের মামলা আপিল বিভাগে রয়েছে। এজন্য আমার সময়ের কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেককে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে ওই সাজাটা দেওয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যারা যুক্ত ছিল বা একই উদ্দেশ্যে যারা সেখানে যারা এসব কর্মকাণ্ড করেছে সেগুলো বিবেচনা করেই ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এখন চূড়ান্ত শুনানিতে হাইকোর্ট হয়ত এটা কমাতেও পারেন।’

এফএইচ/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।