রাইফ ইফতেখার -এর কবিতা
যে চোখে জোসনা বোনা
যে চোখে জোসনা বোনা, আধো রাতে হয়তোবা তার
খেয়ালী বুকের মাঝে জোনাকেরা পেতে সংসার
কথা কয়, কাছে টানে, এনে দেয় ধরণীর ঘোর
সেও বুঝি খোঁজে পথ, বিহবল ভুলের বিভোর।
যে চোখে চন্দ্র নামে ,তারে যেন মায়াময় রাত
জোসনার ছুরি দিয়ে চুরি করে হৃদয় হঠাৎ
আলতো ছোঁয়ার মতো ছুঁয়ে দিয়ে বিহবল মনে
কী খেলায় ডেকে যায় নিশি পাওয়া রাতের গহীনে।
অধরে পুলক তুলে যে কিশোরী রমণীর সাজে
রিনিঝিনি পল্লবে দুলে ওঠে নেশাতুর ভাঁজে
মায়া হয়ে মিশে যায়, লীলাভরা বিহনের ভুলে
ধবল আলোর মতো তার কথা কার বুকে দোলে।
আবেগি স্বপন ভুলে যে যুবক পিচঢালা পথে
অতিকায় পৃথিবীতে ডানা তোলে আহত আঘাতে
তার হাতে ধরা দিয়ে পূর্ণিমা জোসনার রেণু
উড়ে যায় আলো হয়ে ছায়াময় কোন মূর্ছনায়।
বহমান স্মৃতি জুড়ে বহুদিন বকুলের ঘ্রাণ
পাইনি, হয়ত তাই শরীরে সেলাই করি প্রাণ
দোহারা শরীরমাঝে কোন বৃক্ষ পরাগ, পাতায়
পবনে ভাসিয়ে আনে, নিশিনীড়ে দাহের প্রতাপ।
গৃহত্যাগী হবে বলে যে মানুষ জোসনার দ্রাক্ষায়
বোধিমূল ভুলে গিয়ে বহুদিন পথ হেঁটে যায়
তার ধ্যানে লুম্বিনির শালবনে প্রত্যহই সুন্দরের নাম
কোন এক কিশোরীনি লিখে যায় নব বীথিকায়।
স্বপ্ন আর বাস্তবতা
কে বলেছে আজো ভোর হতে হবে, ভোর হতে হবে রোজ
গাঢ় নিশীথের আঁধারেই হোক, ধল চাঁদনীর খোঁজ
দিন কিবা রাত আঁধার যেখানে, ঘিরে আছে চারপাশে
কী ক্ষতি তবে, বোবা চোখ ঘিরে রাত্রির বসবাসে
গতির দাহনে বারুদ কামান, বিদ্ধ করবে কত
কতটুকু ক্ষতি, ফুলের পাপড়ি মুছে দিত সব ক্ষত
অস্ত্রের চোখে চোখ রেখে যদি বলা যেতো শোর তুলে
মানছি না আমি তোমার দাপট, পাখিদের সুর ভুলে
বোকা বালকের আবেগের জলে, বালিকার গাঢ় চোখে
মৃত্যুর মত ভালোবাসা যদি, লেগে যেত অপলকে
জোনাকির মতো অপাপবিদ্ধ হৃদয়ে তাদের যদি
প্রতি প্রহরের ভালোবাসা নিয়ে বইত আলোর নদী
ভুখা মানুষের তৃষ্ণার অতলে, যে কথা লুকোনো থাকে
মুক্তোর রুপে ঝরতো তাদের কান্নার নীল বাঁকে
অথবা দ্রোহের কপাট ভেজিয়ে খুব বিপ্লবী কেউ
আঁকড়ে ধরত বিশ্বাস তার, বিরুদ্ধে রেখে ঢেউ
সুহৃদ স্বপ্নে ডানা মেলে মেলে এক নীল প্রজাপতি
ঘুমহারা চোখে এনে দিতো যদি নিদ্রাশীতল রাতি
আর বাতাসের গাঢ় কোলাহলে, নিহত নাবিক হয়ে
ভেসে যেতো সব ক্লান্তির দল, লোনা জলে দাগ বয়ে
সব হারানোর স্মৃতি নিয়ে চলা এক মানুষের পাছে
প্রতারক যত আশার বাণীরা, ভোর এনে দিলে কাছে
তার চোখে নামা আঁধারের মাঝে স্বপ্নের ধ্রুব রাত
যদিবা আনতো একবার, তবে রাত্রি`ই বেচে থাক!
প্রেম বিরহের পাঠ
আমার মনের চৌকাঠে এখন রাত, তারার আকাশে ধল চাঁদোয়ার ঢল
তোমার হাতের স্পর্শের মত, স্বপ্নের নদী এখনো ছলাৎছল
কার্পাস ফাটা তুলোর মিছিল নিয়ে, তোমাকে ছুঁয়েছে ভেজা শিউলির আঁচ
আমিও তোমার গলার তিলের দেশে, নিজেকে খুঁজছি হারিয়ে বিসম্বাদ
শাদা কুয়াশার পর্দায় দুলে দুলে, হঠাৎ কুহক ডাহুকের চিৎকারে
নিজেকে ভোরের নরম আলোয় মেলে, খুঁটে খুঁটে খুঁজি পাখিদের সংসারে
তারা স্বরলিপি লেখে আমাদের নামে, ইস্পাহানের হাটে হবে তার পাঠ
আর তারস্বরে খেয়ালী প্যাঁচার চোখ, জমজ দৃষ্টি বিনিময়ে নাড়ে ঘাড়
দূর কুঠুরিতে ডুব দিয়ে পানকৌড়ি, তুলে নিয়ে আসে গল্পের মুখরতা
শ্যামল নদীর উজানী স্রোতেরা থামে, থামে অগনন রুপোল মাছের কথা
আমাদের তরে বুনো শালিকের দল, লুট করে আনে কৃষকের পুরো মাঠ
আর কণা কণা দেহের বাবুই পাখি, করবে রচনা শিল্পের পুনঃপাঠ
দুলিয়ে শরীর কালো কোকিলেরা সব, গাইছে গজল আমাদের আমন্ত্রণে
আগুনপোকারা অবিরাম আলো জ্বেলে, তারাদের নাম দিচ্ছে মোদের নামে
তখন গোধূলি রক্ত প্রদীপ তুলে, বাতাসেরা হেসে দেখিয়ে দিচ্ছে চোখ
কেশর দুলিয়ে দীঘল ধানের খেতে, মৃদু ছুঁয়ে যায় তোমার নরম মুখ
জলের ঢেউতে দুলিয়ে ধবল ফুল, শাদা শাপলার চোখে লেগে থাকা ঘুম
ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে বিরহী বোধের মতো, তোমার ঠোঁটের আলতো অলস চুম
তাই মেঘে মেঘে গড়িয়ে তারাও কাঁদে, ঈর্ষার ঝড়ে তুফান উড়ালো বনে
ডালে ডালে দুলে বিরহের কল্লোলে, খুন হয়ে যায় বৃষ্টির নামে নামে
কাশফুলেদের পালঙ্কে বসে আজ, আমরা দেখবো ময়ূরী পেখম তুলে
রাজহাঁসেরাও নামিয়ে মাথার ঝুঁটি, তোমার চোখেতে পায়রারা পথ ভোলে
আধো রাতে ফোঁটা বকুলের মালা গেঁথে, তোমার একটু চোখের দৃষ্টি পেতে
মাথা নুইয়ে যায় রাজকুমারের দল, বিরহে তাদের অশ্রু ছলাৎছল
সবার হৃদয়ে বিরহের বীজ বুনে, আছো তুমি চেয়ে আমার চোখের পানে
আমিও ভাবছি স্বপ্নের কথকথা, আলতো আওয়াজে বলব তোমার কানে
আমাদের তরে মুখর আলোর সাঁজ, ভালবাসাময় আয়োজন বুকে বুকে
আমরাই বুঝি প্রকৃতির মতো করে, ফুলেল রাত্রি রচনা করব আজ
আর হৃদয়ের সোল্লাশে এসো মিলি, আমরা দুজন প্রেম খুঁজে ফিরি আজ
পুরো পৃথিবীর ভালবাসা নিয়ে বুকে, ধ্রুপদ মিলনে উড়াই পঙ্খিরাজ
ভালোবাসাময় কিছু ক্ষণিকের তরে, কালো রাজপথে কপোত মিছিল হোক
তরল চোখের তৃষ্ণায় ধুয়ে ধুয়ে, কপট উথানে কাঁপুক তোমার বুক।
আমারও শখ
আমারও যে আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি হবার শখ
সোঁদা মাটির গন্ধ মেখে, শীতল ঘাসের সুর্মা চোখে
ঘোলা জলের উঠোন বেয়ে গড়িয়ে অপলক
আমারও যে বরফ শীতল বৃষ্টি হবার শখ
এখনো কি পাখ ছড়িয়ে জলেতে দাও ডুব
তোমার পায়ে তুলোট বাতাস ঠাণ্ডা আনে খুব
আর হৃদয়ের মেঘ ঝরিয়ে ভুল অসুখের দল
উড়িয়ে আনে স্মৃতির পবন অশ্রু ছলছল
তাই আমিও তোমার চোখের জল জহুরী হতে
খোয়াই নদী শান্ত ভীষণ মগ্ন জলের স্রোতে
পথ হারাবো বৃষ্টি হয়ে নাহয় ধ্যানী চোখ
বিভোর হয়ে খুঁজতে তোমায় বিরহী উন্মুখ
আমিই বুঝি অশ্রু ভীষণ, জল ঝরনার ক্ষত
তোমার চোখের পাতায় ঝরা বৃষ্টি অবিরত
অথবা এক নীলাভ আকাশ মনের নটরাজ
অনুভূতির কান্না হাসির নিটোল ধারাপাত।
এইচএন/আরআইপি