প্রতিবন্ধিতা জয়ের প্রত্যয় ওদের


প্রকাশিত: ০৪:১৯ এএম, ০৬ নভেম্বর ২০১৫

শেরপুর সদর উপজেলার আন্ধারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রতিবন্ধী সুমাইয়া জাহান। ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। পারে না এক মিনিটের জন্যও সোজা হয়ে দাঁড়াতে। তার দুটি হাত অচল। কিন্তু জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার আকাঙ্খার এতটুকু কমতি নেই বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী এ মেয়েটির।

ছেলেবেলা থেকেই পা দিয়ে লেখার অভ্যাস গড়ে তোলে সে। বাবা-মার আন্তরিক চেষ্টায় এবছর সে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ৫ নভেম্বর ছিলো তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষা। সরকারি ভিক্টোরিয়া অ্যাকাডেমি কেন্দ্রে গিয়ে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া মেয়েটির সঙ্গে কথা বললে সুমাইয়া অস্পষ্ট ভাষায় জাগো নিউজকে জানায়, আমি বড় হতে চাই। কারো মুখাপেক্ষী হতে চাই না। তাই লেখাপড়া করছি।

সুমাইয়ার মা মোর্শেদা জাগো নিউজকে বলেন, জন্মগতভাবে সুমাইয়া বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী। অনেক চিকিৎসা করেও সে ভালো হয়নি। কিন্তু প্রচণ্ড মেধাবি। ছোটকাল থেকেই তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করানো হয়। যা পড়ে তাই মনে রাখতে পারে। প্রতিবন্ধী হলেও তার ইচ্ছা শক্তি প্রবল। তিনি মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া চান।

মুন্সীর চর মতিজান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ফিরোজ আহমেদ রিপন। সে জন্মগত বাক প্রতিবন্ধী। বাবা আব্দুল মমিন কৃষক, মা  শান্তি বেগম গৃহিনী। শহরের আইডিয়াল প্রিপারেটরী অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে এবার সে জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। লেখাপড়া করে কি হতে চাও এমন প্রশ্ন করা হলে কাগজে লিখে উত্তর দেয়, আমি বড় হয়ে সৎ পুলিশ অফিসার হতে চাই।

জয় চৌহান নামে আরেক শারীরিক প্রতিবন্ধী শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া অ্যাকাডেমির ছাত্র। পরীক্ষা দিচ্ছে আইডিয়াল প্রিপারেটরি কেন্দ্র থেকে। সোজা হয়ে সে দাঁড়াতে পারে না। হাতের উপর ভর করে চলতে হয় তাকে। লেখাপড়া করে শিক্ষক হতে চায় জয়। তার বাবা গোপাল চৌহান চা বিক্রেতা।

গৃহিনী মা শুক্লা চৌহান জাগো নিউজকে জানান, জন্মের পর ভালো আছিল। দুই বছর বয়স থেকে পা চিকন হইতে থাকে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় আর সোজা হইয়া দাঁড়াতে পারে না। আমরা গরীব। তারপরও ছেলের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেইখ্যা অরে পড়াইতাছি।

তিন প্রতিবন্ধীর ব্যাপারে জানতে চাইলে শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব মো. হেদায়েতুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সুমাইয়া পা দিয়ে লিখলেও তার লেখা চমৎকার। সকল প্রশ্ন তার কমন পড়েছে বলে সে জানিয়েছে। মেয়েটি ভীষণ মেধাবি।

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী সকল শিক্ষার্থী অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের দায়িত্বরত শিক্ষকদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

হাকিম বাবুল/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।