ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে নাতিকেই হারাচ্ছেন দাদি!
যশোরে ছেলে হত্যার মামলা করে এখন নাতিকে হারাতে বসেছেন দাদি জোহরা বেগম। ছেলে আবদুল আলীম হত্যা মামলার আসামিরা নাতি নবম শ্রেণির ছাত্র মনিরুল ইসলাম রাজনকে তুলে নিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখন তাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে আরেকটি হত্যা মামলায়।
এসব ঘটনা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে ন্যায় বিচার চাইলেন বৃদ্ধা জোহরা বেগম। তিনি যশোর উপশহর কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার যশোর প্রেসক্লাবে রাজনের পরিবারের সদস্যরা এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাজনের দাদি জোহরা বেগম অভিযোগ করেন, শহরের কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার জাকির মোল্ল্যাসহ সন্ত্রাসীরা ১৯৯৭ সালের ২৫ নভেম্বর তার বড় ছেলে আবদুল আলীমকে খাজুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নির্মমভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সেই সময় কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার মোসলেম মোল্লার ছেলে জাকির মোল্লা, রশিদ বক্সের ছেলে মিলন বক্স, কটা মোল্লার ছেলে মিন্টু মোল্লা, আইজদ্দিন দফাদারের ছেলে মিজা দফাদার, জফফারের ছেলে সাইদুল, সদর মোল্লার ছেলে কটা মোল্লা, মোসলেম বিশ্বাসের ছেলে নাছির মোল্লা ও মিন্টু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলাটি বর্তমানে যশোর আদালতে বিচারাধীন আছে।
দেড়যুগ ধরে এ হত্যা মামলা তুলে নেয়ার জন্য আসামিরা জোহরা বেগম ও তার পরিবারকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। গত ১৯ আগস্ট জোহরা বেগমের মেজ ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিকী ঢাকার কর্মস্থল থেকে বাড়িতে আসেন। তিনি হুমকির বিষয়টি স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের জানালে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তারা ২০ আগস্ট বাড়িতে হামলা চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের মারপিট করে আবু বক্করের ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র রাজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।
জাকির হোসেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা লোহার শাবল, চাপাতি ও পিস্তলের আঘাতে কিশোর রাজনের বাম পায়ের হাঁটুর নিচে হতে পা প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি এবং পরে খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা রাজনের বাম পায়ের হাঁটুর নিচে থেকে কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। তার ডান পায়ের অবস্থাও ভালো না। রাজন বর্তমানে শরীরের নানা স্থানের ক্ষত নিয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছে। হামলাকারীরা শুধু রাজনকে পঙ্গু করে দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি। যড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে স্থানীয় সোহাগ হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। রাজন বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসা নিচ্ছে।
জোহরা বেগম আরও বলেন, তিন মাস ধরে তার নাতি রাজন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করলেও ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারেননি। সর্বশেষ গত ১ নভেম্বর বিজ্ঞ অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত ‘ক’ অঞ্চলে আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। মামলার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু ইব্রাহিম কোতয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজনের ফুফু হাফিজা বেগম বলেন, রাজনের বড় চাচার হত্যাকারীরা প্রভাবশালী। তারা এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। রাজনকে পঙ্গু করে দিয়ে এখন এলাকায় বলছে তারা আওয়ামী লীগে রাজনীতি করে। তাদের অনেক টাকা। তারা টাকা ছড়িয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে কিশোর মনিরুল ইসলাম রাজনের মা মোমেনা বেগম লাবনী বলেন, আমার ছেলে অন্যায় করলে তাকে আইনে সোপর্দ করা হোক। কিন্তু যারা আমার ছেলেকে নির্মমভাবে পঙ্গু করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে রাজনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মিলন রহমান/এমজেড/আরআইপি