চুড়ি দেখে মেয়েকে শনাক্ত করলেন বাবা
জাফলং ভ্যালি বোডিং স্কুলের অভ্যন্তর থেকে গত শনিবার (৩১ অক্টোবর) উদ্ধার করা হয়েছিল অর্ধগলিত অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ। পুরো শরীর পচে যাওয়ায় মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি সে সময়। ওই নারীর হাতে ছিল কেবল একটি চুড়ি। শনাক্ত করার পরিচয় বলতে এই টুকুই।
অবশেষে সেই চুড়ি দেখেই মেয়েকে শনাক্ত করলেন বাবা রফিক মিয়া। জৈন্তাপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই অজ্ঞাত নারীর নাম পুতুল বেগম (২৪)।
হাসপাতালে ওই নারীর কঙ্কালের আলামত রেখে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবেই সিলেট নগরের মানিক পীর (রহ.) গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছিল। আর চুড়িটি রাখা ছিল জৈন্তাপুর থানায়। থানায় রাখা চুড়ি দেখে পরিবারের লোকজন শনাক্ত করেন গৃহবধূ পুতুল বেগমকে।
নিহত পুতুল বেগম সিলেট নগরের মেজরটিলা স্কলারর্স হোম প্রিপারেটরি স্কুলের আয়া। একই ধরনের চুড়ি রয়েছে পুতুলের মায়ের হাতেও।
পরিচয় জানার পর গত বুধবার রাতেই পুলিশ আটক করে পুতুলের স্বামী জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে ওমর ফারুক দুলনকে। দুলন স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলেও জানায় পুলিশ।
দোলনের বরাত দিয়ে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ জানায়, ২০১১ সালে জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট গ্রামের মৃত হেলাল মিয়ার ছেলে ওমর ফারুক দোলনের (৩৩) সঙ্গে বিয়ে হয় বি. বাড়িয়া জেলার নাছিরনগর থানার পান্দাউক গ্রামের মো. রফিক মিয়ার মেয়ে পুতুল বেগমের (২৪)। গত ২ বছর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। পুতুল চলে আসে বাবার বর্তমান ঠিকানা সিলেট সদরের নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার বাসায়। বাবার কর্মস্থল স্কলার্স হোম একাডেমির আয়া হিসেবে চাকরি নেয়। আবার যোগাযোগ শুরু করেন দুলন।
কিছুদিন আগে স্ত্রী পুতুলকে স্কলার্সহোমের কর্ণধার হাফিজ মজুমদারের মালিকানাধীন জাফলং ভ্যালি বোডিং স্কুলের নতুন অফিস দেখাতে নিয়ে যান স্বামী দুলন। সংরক্ষিত সেই এলাকায় স্ত্রী পুতুলকে হত্যা করে দুলন।
দুলন পুলিশকে জানায়, গত ১৯ অক্টোবর স্ত্রী পুতুলকে মুঠোফোন দিয়ে নিয়ে যান জৈন্তাপুর আলুরতল ব্লক ফ্যাক্টরিতে। ওই ফ্যক্টরিতে তিনি চাকরি করে। সেখানে স্ত্রী আসার পরপরই তারা দুজন মিলে সাংসারিক কথাবার্তা বলেন। এরপর স্ত্রী পুতুলকে নিয়ে আলুরতল জঙ্গলের ভেতর যান। সেখানে তাদের দু’জনের কথাবার্তা হয়। এক পর্যায়ে স্ত্রী পুতুলের সঙ্গে আরেকজনের সম্পর্ক রয়েছে কিনা জানতে চান। স্ত্রী না বলার পর দুজনের মধ্যে এ নিয়ে বাক-বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে পুতুলকে পাথর দিয়ে মাথায় ৩/৪ টি আঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে যায়। এরপর মরদেহ ফেলে দেন জঙ্গলের পাশে একটি খালে।
জানা গেছে, গত ১৯ আক্টোবর সিলেট কোতয়ালি থানায় একটি জিডি করেন পুতুলের বাবা রফিক মিয়া। জিডিতে তার মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এদিকে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি কঙ্কাল পাওয়ার খবর প্রকাশ হয়। এমনকি একটি চুড়ি পাওয়া গেছে বলেও গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়।
এ সংবাদ জানার পর বুধবার রাতে কোতয়ালি থানায় করা সাধারণ ডায়েরির কপিসহ জৈন্তাপুর থানায় যান পুতুলের বাবা রফিক মিয়া। এ সময় তার সঙ্গে ছিল ছেলে বায়েজিদ। সেখানে প্রথমে তারা পুলিশের কাছে রাখা চুড়ি দেখতে পান। ওই চুড়ি দেখার পর পরই তারা নিশ্চিত হন এটি পুতুলের।
পুতুলের মায়ের হাতে থাকা চুড়ির সঙ্গে মিলে যায় গত ৩১ অক্টোবর জৈন্তাপুর জাফলং ভ্যালি স্কুল এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের হাতে থাকা চুড়ির। আর এর সূত্র ধরেই আটক করা হয় পুতুলের স্বামী দুলনকে।
নিহতের ভাই বায়েজিদ জানান, কয়েকদিন আগে তার বোনকে চুড়িগুলো কিনে দিয়েছিলেন তার মা আনোয়ারা বেগম। আর চুড়ির সূত্র ধরেই তার নিখোঁজ বোনের সন্ধান মিলেছে বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় জৈন্তাপুর থানা পুলিশের ভঅরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিউল কবির জাগো নিউজকে বলেন, যে কঙ্কালটি উদ্ধার হয়েছিল সেটির রহস্য উদঘাটন হয়েছে। পুলিশের কাছে স্ত্রী পুতুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে দুলন।
তিনি আরও বলেন, পুতুলের স্বামী হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় আমরা তাকে নিয়ে এখন সিলেটের আদালতে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যে তার আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ার কথা রয়েছে।
ছামির মাহমুদ/এসএস/পিআর