কর ফাঁকির অভিযোগে ম্যাকঅ্যাফির প্রতিষ্ঠাতা গ্রেফতার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:০৬ এএম, ০৭ অক্টোবর ২০২০

সুপরিচিত অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার কোম্পানির কর্ণধার জন ম্যাকঅ্যাফিকে স্পেনে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি কর ফাঁকির এক মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন এবং তাকে বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া হতে পারে। খবর বিবিসির।

কৌঁসুলিরা বলছেন, তিনি চার বছর ধরে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেননি। তিনি এর মধ্যেই পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে, বক্তৃতা দিয়ে, ক্রিপটোকারেন্সির ব্যবসা করে এবং তার জীবনী প্রকাশের কপিরাইট বিক্রি করে লাখ লাখ ডলার আয় করেছেন। তবে এসব আয়ের সাথে অবশ্য তার নিজের নামে তৈরি ম্যাকঅ্যাফি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, ম্যাকঅ্যাফি তার নিজের আয় তার মনোনীত বিভিন্ন লোকজনের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি কর ফাঁকি দিয়েছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যদের নামে থাকা প্রমোদতরী ও বাড়ি-জমির মতো সম্পদ গোপন করার অভিযোগ রয়েছে।

জন ম্যাকঅ্যাফি এসব অভিযোগের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।

প্রযুক্তির জগতে ম্যাকঅ্যাফি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি সবার নজর কাড়েন ১৯৮০র দশকে। সে সময় তিনি ম্যাকঅ্যাফি ভাইরাসস্ক্যান নামে প্রথম বাণিজ্যিক অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার বাজারে আনেন।

এটা তারপর শত শত কোটি ডলারের এক শিল্পে পরিণত হয়। ম্যাকঅ্যাফি অবশ্য পরে সেই ব্যবসা ইনটেল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেন। তবে তিনি এখনো তার নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন সাইবার-সিকিউরিটি পণ্য তৈরি করছেন। তিনি নিজে বহুবার ট্যাক্স দেয়ার ব্যাপারে তার বিরাগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন ট্যাক্স জিনিসটাই অবৈধ।

ম্যাকঅ্যাফির নানা বিচিত্র কর্মকান্ড নিয়ে বিভিন্ন সময় খবর হয়েছে। মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজে ২০১২ সালে তার প্রতিবেশীকে গুলিবিদ্ধ এবং মৃত অবস্থায় পাওয়ার পর তিনি ছদ্মবেশ ধরে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

যদিও পরবর্তীতে বিবিসিকে তিনি বলেছিলেন ওই মৃত্যুর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে পুলিশ এখনো তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে।

ডোমিনিকান রিপাবলিকে তাকে একবার কিছু সময়ের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে সময় তার বিরুদ্ধে দেশটিতে অস্ত্র নিয়ে আসার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

২০১৬ ও ২০২০ সালে ম্যাকঅ্যাফি লিবার্টারিয়ান পার্টি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।কেউ কেউ মনে করেন তিনি একজন বিকারগ্রস্ত, উন্মাদ মানসিকতার লোক। এক সাংবাদিক-যিনি বহুবার তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন তার বর্ণনায় ম্যাকঅ্যাফি মিথ্যা বলেন, প্রতারণা করেন এবং পরিস্থিতিকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে ওস্তাদ।

ম্যাকঅ্যাফি নিজে স্বীকার করেন যে তাকে সন্দেহবাতিক, উন্মাদ এবং সিলিকন ভ্যালির বন্য শিশু বলা হলেও তিনি আসলে একজন উদ্যোক্তা, কৌতুহলী এবং সমস্যা সমাধান করতে ভালোবাসেন।

ম্যাকঅ্যাফির অ্যান্টিভাইরাস তিনি নিজে কখনো ব্যবহার করেননি। তার জন্ম যুক্তরাজ্যে। তার মা ইংরেজ এবং বাবা ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনে থাকা একজন আমেরিকান সৈন্য।

তার বাবা পরবর্তীতে নিজের গুলিতেই আত্মহত্যা করেন। ম্যাকঅ্যাফির বয়স যখন ১৫, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।

তিনি পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। তবে অন্য একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে যৌনসম্পর্কের কারণে তার পিএইচডি বাতিল করা হয়। পরে তিনি বেশ কিছু বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিতে চাকরি করেন।

পরে লকহিড মার্টিন কোম্পানিতে কাজ করার সময় তিনি প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের সঙ্গে পরিচিত হন এবং কম্পিউটারগুলোকে ভাইরাসমুক্ত করার পদ্ধতি বের করেন।

এর পরই তিনি নিজের নামে এক কোম্পানি চালু করে এর ব্যবসা শুরু করেন। অনেক পরে তিনি এই কোম্পানি ইনটেলের কাছে বিক্রি করে দেন ৭৬০ কোটি ডলারে। তারই নামে কোম্পানি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার বিক্রি করলেও ম্যাকএ্যাফি বলেন, তিনি নিজে কখনো তার পণ্য ব্যবহার করেননি।

তিনি বলেন, ‌‌‌‌‌‌‘আমি সবসময়ই আক্রান্ত হচ্ছি, কিন্তু আমি কোন সফটওয়্যার সুরক্ষা ব্যবহার করি না। আমি সব সময় আমার আইপি ঠিকানা পরিবর্তন করতে থাকি। কোন ডিভাইসে আমার নাম দেই না এবং ভাইরাস ঢুকতে পারে এমন কোন সাইটে আমি যাই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিরাপদ কম্পিউটিং করি। কেউ আমাকে ইমেইল করলে তাকে ফোন করে জেনে নেই তিনি আমাকে ইমেইল করেছেন কিনা। তার আগে সেই ইমেইল খুলি না।’

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।