পুলিশ যখন আক্রান্ত


প্রকাশিত: ০৫:১৫ এএম, ০৫ নভেম্বর ২০১৫

একের পর এক ব্লগার, লেখক-প্রকাশক হত্যার পর মানুষজন যখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ঠিক সেই সময়ে আবারো পুলিশ হত্যার ঘটনা ঘটলো। এতে জননিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে। যে পুলিশ জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা দিবে তারা নিজেরাই যদি আত্মরক্ষা করতে না পারে তাহলে কী করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা হবে।

গাবতলীতে পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা নিহত হওয়ার ১৩ দিনের মধ্যে গতকাল আশুলিয়ায় পুলিশের একটি চেকপোস্টে তল্লাশির সময় মুকুল হোসেন নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। এ সময় অপর চার পুলিশ সদস্য আহত হয়। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলির পর পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান খাদে পড়ে আহত হয়েছেন পাঁচ পুলিশ সদস্য।

পুলিশ সদস্যদের ওপর উপর্যুপরি হামলায় জনমনে তীব্র শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দেখার সুযোগ নেই। হামলার যে বিবরণ গণমাধ্যমে এসেছে তাতে এটা স্পষ্ট যে কোনো একটি গোষ্ঠি তাদের বিশেষ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এই ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। মোটরসাইকেল আরোহী যে দুই যুবক হামলা চালিয়েছে তারা ছিল সশস্ত্র। খোঁজ খবর নিয়েই তারা যে হামলা চালিয়েছে সেটাও বুঝা যায় হামলার ধরন দেখেই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হামলার বিবরণ অনুযায়ী- ‘মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি ছোরা-চাপাতি হাতে নিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দোকানের সামনে বসে থাকা দুই পুলিশ সদস্যকে আঘাত করেন। হামলাকারীদের একজন আগ্নেয়াস্ত্র বের করে কয়েকটি ফাঁকা গুলিও ছোড়েন। চাপাতি-ছুরিকাঘাতে আহত কনস্টেবল মুকুল হোসেন  দোকান থেকে বেরিয়ে পাশের ভাতের হোটেলে গিয়ে উপুড় হয়ে পড়েন। হাতে ও পেটে চাপাতির আঘাত নিয়ে কনস্টেবল নূরে আলম রাস্তা পার হয়ে নন্দন পার্কের দিকে দৌড় দেন। তাঁদের সঙ্গে থাকা অপর তিন কনস্টেবল প্রতিরোধে এগিয়ে না এসে পেছনের শালবনের ভেতরে দৌড় দেন। গুলির শব্দে নন্দন পার্কের খোলা জায়গায় রাখা বাসের কর্মীরা ও কারখানামুখী শ্রমিকেরা এগিয়ে এসে দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে চন্দ্রার দিকে পালিয়ে যেতে দেখেন।`

এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসছে- পাঁচ জন সশস্ত্র পুলিশ কেন দুইজন দুর্বৃত্তকে নিবৃত্ত করতে পারলো না। পুলিশের হাতে অস্ত্র থাকার পরও সেই অস্ত্রও কেন পুলিশের চরম বিপদে ব্যবহার হল না। অথচ এই পুলিশই কিন্তু কালিহাতিতে নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি চালিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়া পুলিশের অন্য তিন সদস্য কেন আক্রান্ত দুইজনকে ফেলে দৌড়ে পালিয়ে গেল সেটিও ভেবে দেখতে হবে। এটা কি পেশাদারিত্ব দায়িত্বশীলতার চরম লঙ্ঘন নয়? এ রকম চরম দায়িত্বহীন পুলিশ দিয়ে আসলে কী হবে? প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়েও।  কেন পুলিশের ওপর বার বার হামলা হচ্ছে সেটিও ভেবে দেখতে হবে। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনাটা এখন জরুরি।

দুঃখজনক হচ্ছে, পুলিশ হত্যারও কোনো বিচার হয় না। গত তিন বছরে নাশকতায় ২১ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় মামলা হলেও তদন্তে অগ্রগতি নেই। একটি মামলারও বিচার সম্পন্ন হয়নি।  

পুলিশের ওপর আক্রমণ আসলে রাষ্ট্রকেই সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানো। কাজেই এ ধরনের ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। প্রয়োজনে দ্রুত বিচার আদালতে এসব জনগুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার করতে হবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।