পরবর্তী টার্গেট বুদ্ধিজীবী লেখক কবি ও সাংবাদিকরা!
ব্লগার ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশক ও জাগৃতি প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা এবং অন্যান্য প্রকাশকদের উপর হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদা। এছাড়া পরবর্তী টার্গেট হিসেবে লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবী, পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের সম্পাদক-সাংবাদিক ও অভিনেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে একটি বিবৃতি দিয়েছে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি।
জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইনটেলিজেন্সের বরাত দিয়ে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত প্রকাশক ইসলামী উগ্রপন্থিদের সমালোচনা করে লেখা বই প্রকাশ করেছিলেন। তাদের দুজনকেই চাপাতি দিয়ে আঘাত করা হয়। এর আট মাস আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ হামলার শিকার ওই দুই ব্যক্তির প্রকাশনা সংস্থা থেকে অভিজিৎ রায়ের বই বের হয়েছিল। এদের মধ্যে হামলায় ফয়সল আরেফিন দীপন সঙ্গে সঙ্গে মারা যান।
শনিবার আল-কায়েদার স্থানীয় শাখা (আল-কায়েদা ইন দি ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট) টুইটারে হামলার দায় স্বীকার করে কয়েকটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লেখকদের চেয়েও ওই দুই প্রকাশক খারাপ। কেননা তারা ওই বই দুটি প্রচারে সাহায্য করেছেন। ধর্ম অবমাননাকারী লেখকদের ওই লেখার জন্য মোটা অঙ্কের টাকাও দিয়েছেন তারা।
এর পরে কে? শিরোনামে দ্বিতীয় আরেকটি বিবৃতি দিয়েছে আল-কায়েদা। সেখানে পরবর্তী টার্গেট কী ধরনের হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবী, পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের সম্পাদক-সাংবাদিক ও অভিনেতা পেশার সঙ্গে জড়িতরা তাদের পরবর্তী হামলার লক্ষ্য।
এর আগে আরও তিনটি একই ধরনের বিবৃতি দিয়ে দুই বিদেশি ও শিয়া মুসলিমদের উপর হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহিংসতার জন্য বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেছেন। পুলিশও দুই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্কিত সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করেছে। কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গি গোষ্ঠীর দায় স্বীকারকে ভুয়া বলে দাবি করেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেশ কয়েক দশক ধরে দেশীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর একটি নেটওয়ার্ক দমনে ব্যাপকভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক রয়েছে। এ বছর তারা পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে। এছাড়া ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এই গোষ্ঠীর সদস্যরা। এগুলোর বেশির ভাগই জনসমাগমের মধ্যে হয়েছে।
গত মাসে বাংলাদেশে হামলা ও হুমকি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস বাংলাদেশে নিজেদের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে বলে এক মাস আগে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য পায়। এদিকে, সোমবার দেশীয় জঙ্গি গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে একটি চিঠি পাঠিয়ে গণমাধ্যমে পর্দা ছাড়া নারীদের কাজ করা থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে তাদের নির্দেশনা না মানলে সেখানে হামলা চালানোর হুমকি দেয়। ২৪ অক্টোবর ঢাকায় শিয়া মুসলিমদের একটি বিশাল সমাবেশে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে এক কিশোর নিহত হয়।
অনলাইনে প্রায়ই ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের হিটলিস্ট প্রকাশ করা হচ্ছে। ফলে উগ্রবাদীদের নজরে পড়ে যেতে পারে আশঙ্কায় অনেক লেখক ও সাংবাদিক লেখা প্রকাশে সংশয়ে ভুগছেন। জীবনের ঝুঁকি বাড়ায় অ্যাক্টিভিস্টদের পশ্চিমা দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।
এসআইএস/আরএস/এআরএস/পিআর