লাইট হাউজের সুফল পাচ্ছেন নওগাঁর মানুষ
আলোকিত ঘর বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) লাইট হাউজ। সরকারি প্রজেক্ট গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নে ২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্য সচেতনার জন্য এইচআইভি (এইডস) ও সমকামী প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে লাইট হাউজের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
লাইট হাউজের সেবার উপকারিতা ও সুফল ভোগ করছেন। কিন্তু এ সংস্থার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে কয়েকশ কর্মী বেকার হয়ে কর্মহীন হয়ে পড়বে। সেই সঙ্গে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করতে হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলা ২০টি স্থানে ১৪ জন স্টাফ দিয়ে ৪৫ জন হিজরাসহ প্রায় ৬শ জন মানুষকে ফ্রি সেবা প্রদান করছে লাইট হাউজ। যেখানে দুজন নারী ও ১২ জন পুরুষ কর্মী রয়েছেন। এছাড়া প্রতিমাসে অভিজ্ঞ ডাক্তার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অবসর প্রাপ্ত ডা. জগনাথ মানিককে দিয়ে ১২ দিন চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
বগুড়া থেকে মাসে পাঁচদিন এইচআইভি রক্ত পরীক্ষা করার জন্য আসেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। ৬শ জনের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। বাকিদেরও পরপর রক্ত পরীক্ষা করা হবে। সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা গ্রাম থেকে অফিসে এসে এইচআইভি পরীক্ষা করতে আসতে চান না। তাদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য যাতায়াত ভাড়া বাবদ একশ টাকা করে প্রদান করা হয়ে থাকে।
নওগাঁ লাইট হাউজ অফিস সূত্রে জানা যায়, যে সমস্ত মানুষ অন্ধকারে থাকতো তাদেরকে আলোতে নিয়ে আসার জন্য এই লাইট হাউজ। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সেবা দিতে গিয়ে সংস্থার প্রধান মনে করেছিলেন নেশাগ্রস্ত এসব মানুষকে আলোর দিকে নিয়ে আসতে হবে। এরপর ১৯৮৯ সালে লাইট হাউজ নামে একটি সংস্থা বগুড়া জেলায় প্রধান শাখা গড়ে তোলেন নির্বাহী প্রধান হারুন-অর-রশিদ।
২০১০ সাল থেকে এইচআইভি (এইডস) ও সমকামী প্রতিরোধ স্বাস্থ্য সচেতনার জন্য বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশালসহ ১২টি জেলার ৩২টি ব্রাঞ্চে সুপারভাইজার, ম্যানেজার, কাউন্সিলর, কেয়ারটেকারসহ প্রায় ৪৫০ জন কর্মী সেবা প্রদান করে আসছেন। সরকারের মাধ্যমে আইসিডিডিআরবি এ অর্থ ও মূল্যবান ওষুধ লাইট হাউজ কনসোটিয়ামকে বরাদ্দ করছে।
স্বাস্থ্য সচেতনার জন্য মেল সেক্স হ্যাভ উইথ মেল-পুরুষে পুরুষে সেক্স (এমএসএম), মেল সেক্স ওয়ার্ককার (এমএসডব্লিউ) এবং হিজরাদের নিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত করে লাইট হাউজ।
মাঠ পর্যায়ে একটা স্থানে ৮/১০ জনকে একত্র করে নিরাপদ সেক্স সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। চাহিদা অনুযায়ী নিরাপদ সেক্স করার জন্য কনডম এবং ল্রুবিকেট জেল প্রদান করা হয়। এছাড়াও লিফলেট বিতরণ এবং কারো যৌন রোগ আছে কিনা, থাকলে অফিসে নিয়ে এসে অভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়।
লাইট হাউসের কার্যক্রম এলাকায় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সিভিল সার্জন, ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিক, অ্যাডভোকেট, পৌর মেয়রকে নিয়ে তিন মাস পরপর কাউন্সিলিং করা হয়ে থাকে। এছাড়া সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীদেরও স্বাস্থ্য সচেতনার জন্য আলোচনা করা হয়।
নওগাঁ লাইট হাউজ অফিস ম্যানেজার মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, ২০১০ সালে ৩ বছরের প্রজেক্ট প্রকল্প নিয়ে নওগাঁ শহরের হোটেলপট্টিতে একটি অফিস নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে লাইট হাউজ। এরপর দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
তিনি আরো জানান, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়বে কয়েকশ যুবক। প্রজেক্টের মেয়াদ শেষের দিকে এসে এজন্য অনেক কর্মীকে বাদ দিতে হচ্ছে। এ সংস্থা যেন বন্ধ না হয় এজন্য সরকারের নজর দেয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া যদি এ সংস্থাকে প্রজেক্টের কোনো কাজ দেয়া হয় তাহলে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো।
আব্বাস আলী/এমজেড/এমএস