মুরগির মাংস-চিংড়িতে মিলল করোনা
ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত হিমায়িত মুরগির ডানা ও ইকুয়েডরের চিংড়ি মাছে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে চীন। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শেনঝেনে আমদানি করা হয়েছিল মুরগির মাংস। বৃহস্পতিবার শেনঝেন শহরের সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, মুরগির হিমায়িত মাংসের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের হিমায়িত মাংস ও অন্যান্য খাবার কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এর আগে, গত জুনে রাজধানী বেইজিংয়ের জিনফাদি মাংস ও সামুদ্রিক খাবারের বাজারে করোনার নতুন প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। ওই বাজারের সামুদ্রিক খাবার থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানকার সব বাসিন্দার করোনা পরীক্ষা করা হয়।
শেনঝেনের স্থানীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র নিয়মিত পরীক্ষার অংশ হিসেবে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা মুরগির হিমায়িত ডানার নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য দূষিত খাদ্যপণ্যের সংস্পর্শে আসা প্রায় প্রত্যেককে শনাক্ত করার পর পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া ব্রাজিল থেকে আনা মাংস যেখানে রাখা হয়েছিল, তার আশপাশের অন্যান্য খাবারও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তবে সবার পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে।
বেইজিংয়ে অবস্থিত ব্রাজিল দূতাবাসের কাছে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাড়া দেয়নি। শেনঝেনের মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বলছে, আমদানিকৃত মাংস এবং সামুদ্রিক খাবারের ব্যাপারে লোকজনকে আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য অবশ্যই পূর্ব-সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এদিকে, বুধবারও চীন বলেছে, ইকুয়েডর থেকে আমদানিকৃত চিংড়ির প্যাকেটের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আরও বেশ কয়েকটি শহরেও সামুদ্রিক খাবারে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়েছে। ব্রাজিলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গত জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে সামুদ্রিক খাবার ও মাংস আমদানি বন্ধ করে দেয়। তবে সম্প্রতি দেশটির প্রধান প্রধান বন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং বৃদ্ধি করার পর কিছু দেশ থেকে আমদানি শুরু হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটির হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। প্রাথমিক গবেষণায় ওই বাজারে বিক্রি হওয়া প্রাণীর দেহ থেকে করোনা সংক্রমণের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানায় বেইজিং।
এরপর বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনাভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণকে মহামারি ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয় কয়েক মাস আগে। প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও বিশ্বজুড়ে করোনায় সংক্রমণ এবং মৃত্যু ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। চীনে এই ভাইরাসে ৪ হাজার ৬৩৪ জন মারা গেলেও বিশ্বজুড়ে সেই সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত লাখ।
অন্যদিকে, চীনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ হাজার ৭৫৬ জন। কিন্তু বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। করোনা মহামারির লাগাম টানতে বিশ্বজুড়ে দুই শতাধিক ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে মঙ্গলবার বিশ্বে প্রথম করোনা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে এক চিলতে আশার আলো দেখিয়েছে রাশিয়া।
দেশটি বলছে, চলতি বছরের শেষের দিকে এই ভ্যাকসিন বাজারে চলে আসবে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা রাশিয়ার এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা এবং সুরক্ষা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
সূত্র: রয়টার্স, ব্লুমবার্গ।
এসআইএস/জেআইএম