বিশ্বের যেসব জায়গায় এখনও মজুত বিপজ্জনক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০৮ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২০

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরণের পর থেকেই বিপজ্জনক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। বিভিন্ন দেশে এখনও বিপুল মজুত রয়েছে এ রাসায়নিকের। দাবি উঠেছে, সেগুলো দ্রুততম সময়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার বা বিকল্প ব্যবস্থা করার।

জেনে নেয়া যাক বিশ্বের কোথায় কোথায় রয়েছে এসব অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুত

ভারত
ভারতের অন্যতম জনবহুল শহর চেন্নাইয়ের একটি আবাসিক এলাকা থেকে মাত্র আধা মাইল দূরেই মজুত ছিল প্রায় ৭৪০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৩৭টি কন্টেইনারে রাখা ছিল এ বিস্ফোরণযোগ্য রাসায়নিক।

২০১৫ সালে কৃষিকাজে ব্যবহারের কথা বলে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসব অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানি করেছিল একটি কোম্পানি। কিন্তু তামিলনাড়ুর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এর ছাড়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে আইনি লড়াই চলার পর তদন্তে বেরিয়ে আসে, কোম্পানিটি ভুয়া লাইসেন্স দেখিয়ে অবৈধভাবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানি করেছিল। তারা খননকাজে যুক্ত বেসরকারি ব্যক্তি ও কোম্পানির কাছে এসব রাসায়নিক বিক্রিও করত।

jagonews24

সবচেয়ে ভয়ের কথা, ২০১৫ সালের এক বন্যায় মজুত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে এর কিছু অংশ নষ্ট করে ফেলা হয়। বাকি ৬৯৭ টন সম্প্রতি নিলামে তুলে পার্শ্ববর্তী রাজ্য তেলেঙ্গানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইয়েমেন
ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় আডেন বন্দরে ১০০টির বেশি কন্টেইনারে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত রাখা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে তদন্তের নিদেশ দিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল। বলা হচ্ছে, তিন বছর আগে এ রাসায়নিক আমদানি করা হয়েছিল। সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনী তা জব্দ করে।

আডেনের গভর্নর তারিক সালাম জানিয়েছেন, বন্দরে মোতায়েন নিরাপত্তা বাহিনী ১৩০টি কন্টেইনারে প্রায় ৪ হাজার ৯০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জব্দ করেছে।

jagonews24

তবে আডেন বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই কন্টেইনারগুলোতে জৈব ইউরিয়া রয়েছে, যা কৃষিক্ষেত্রে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ইরাক
বৈরুত বিস্ফোরণের পর ইরাক সরকার দ্রুত সব নৌ ও বিমানবন্দরে বিপজ্জনক রাসায়নিক সন্ধানের নির্দেশ দেয়, যার প্রেক্ষিতে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের খোঁজ মেলে।

ইরাকি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গত ৯ আগস্ট জানানো হয়েছে, বাগদাদ বিমানবন্দর থেকে বিপজ্জনক ওই রাসায়নিক নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া
বৈরুতে বিস্ফোরণের অনেক আগেই নিউক্যাসেল ও নিউ সাউথ ওয়েলসের জনগণ সিটি সেন্টার থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরের একটি গুদামে রাখা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিশাল মজুত সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।

তবে এর দায়িত্বে থাকা ওরিকা নামে একটি কোম্পানি জানিয়েছে, সেখানে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট যে জায়গায় মজুত রয়েছে সেটি পুরোপুরি আগুন প্রতিরোধী এবং অদাহ্য বস্তু দিয়ে তৈরি। অর্থাৎ তাদের ওখানে বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি নেই।

jagonews24

সেফওয়ার্ক এসএ নামে একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় অন্তত ১৭০টি জায়গায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুত রয়েছে।

যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের লিঙ্কনশায়ার, ইমিংহামসহ হাম্বার অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুতের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।


অ্যাসোসিয়েটেড ব্রিটিশ পোর্টস (এবিপি) জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের বন্দরগুলোতে কঠোর বিধিবিধান অনুসরণ করা হয় এবং বিপজ্জনক রাসায়নিকটি নিরাপদে সংরক্ষণ ও পরিবহন নিশ্চিত করা হয়।

jagonews24

বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট স্বাভাবিক অবস্থায় পুরোপুরি স্থিতিশীল। তবে কোনওভাবে দূষিত হলে (যেমন- তেল লাগলে) এটি বিপদের কারণ হতে পারে।

সূত্র: বিবিসি

কেএএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।