সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য দেখে অভিভূত ১২ পর্যটনমন্ত্রী
বিশ্বের বন্যপ্রাণীর বৃহত্তর আবাসভূমি ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দার্য্য উপভোগ করে অভিভূত হয়েছেন বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডাব্লিটিও) সেক্রেটারি জেনারেল তালেব রিফাইসহ এশিয়ার বৌদ্ধ হ্যারিটেজ সমৃদ্ধ ১২ দেশের পর্যটনমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এই প্রতিনিধি দল হ্যলিকপ্টার যোগে কক্সবাজার থেকে প্রথমে বাগেরহাটের বিএনএস মংলা নৌঘাটিতে অবতরণ করেন। পরে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দল মংলা নৌঘাটিতে থেকে ‘টাইগার ট্যুর’ নামের বিশেষ একটি পর্যটন জাহাজে করে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের হারবাড়িয়ায় যান। এরপরে তারা সুন্দরবনের কমরজলে কুমির ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ঘুরে দেখেন।
প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে টাইগার ট্যুর জাহাজের ডেকে বসে বিদেশি অতিথিরা সুন্দরবনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দার্য্য উপভোগকালে সুন্দরবন বিষয়ক সব তথ্য মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন করেন সুন্দরবন খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক সুনিল কুমার কুন্ডু।
এসময়ে তাদের জানানো হয়, পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই বন এখন ‘ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট’। প্রশাসনিক ভাবে পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের ৪টি রেঞ্জের ৫৮টি কর্ম্পামেন্টে বিভক্ত বাংলাদেশের সুন্দরবন। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় প্রাকৃকিত ভাবে ৬ বার তার রূপ বদলায় এই সুন্দরবন। শরণখোলা রেঞ্জের কটকা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার রয়েছে অপূর্ব সুযোগ।
এছাড়া সুন্দরবনে ১০৬টি বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দেড় লাখ চিত্রল ও মায়া হরিণ, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন ও দুই প্রজাতির তিমিসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরিসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী ও পাখি রয়েছে ৩শ` প্রজাতির। ‘সুন্দরী’ ‘গেওয়া’ ‘পশুর’ ‘গরানসহ ৩শ` ৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে।
জালের মতো করে ছড়িয়ে রয়েছে ৪৫০টি ছোট-বড় নদ-নদী ও খাল। সুন্দরবনের এসব জলভাগে রূপালী ইলিশসহ ২১০ প্রজাতির মাছ, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, বিশ্বখ্যাত ‘শিলা র্স্কাস্পসহ ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৪২ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক রয়েছে।
বন্যপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বর্তমান ইতোমধ্যে সুন্দরবনের সব সম্পদ আহরণ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। প্রতি বছর দেশি-বিদেশি প্রায় দুই লাখ ইকো-ট্যুরিস্ট (প্রতিবেশী পর্যটক) সুন্দরবনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দার্য্য উপভোগ করতে এখানে আসেন।
বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সুন্দরবনে বিভিন্ন সময়ে নৌ দুর্ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন ’অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। এ জন্য কিছু কিছু দুর্ঘটনা ঘটবে। পরিবেশের ক্ষেত্রেও এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। বিদেশে বন ফায়ারে বন ধ্বংস হয়ে যায়। এ গুলোতো হতেই থাকবে। এইসব মিলিয়েই জীবন। জীবনকে চলতে দিন তার মতো করে।’
সুন্দরবন সফরে ২০ সদস্যের এ প্রতিনিধি দলে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন’র সেক্রেটারি জেনারেল তালিব রিফাই, চীন, ভুটান, ভারত, কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, জাপান, ভিয়েতনামের পর্যটনমন্ত্রী, সচিব, রাষ্ট্রদূত,বৌদ্ধ ধর্মও কৃষ্টি বিশেষজ্ঞরা ছিলেন।
দুই দিনের বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা বর্ননা করে জাতি সংঘের ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের সেক্রেটারি জেনারেল তালিব রিফাই বিকেলে সুন্দরবন পরিদর্শন শেষে দিগরাজ নৌঘাটিতে এসে বাংলাদেশ সফরে তার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়েছে বলে জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়, সচিবরা টেকসই উন্নয়নের প্রশ্নে আন্তরিক এবং তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
এসকেডি/আরআইপি