অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ট্র্যাজেডির প্রথম শিকার নয় বৈরুত
অডিও শুনুন
মঙ্গলবার ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে বৈরুত বন্দর। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৩৫ জন, আহত কয়েক হাজার। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলটিকে ‘বিপর্যস্ত এলাকা’ ঘোষণা দিয়েছে লেবানিজ কর্তৃপক্ষ। দেশটি আগে থেকেই অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছিল, এবার চরম মানবিক সংকটেরও মুখোমুখি হয়েছে তারা।
লেবানিজ রাজধানীতে বিস্ফোরণের কারণ এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বন্দরের একটি গোডাউনে মজুত রাখা ২ হাজার ৭০০ টনেরও বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকেই এ ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা। ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে, বিপজ্জনক রাসায়নিক থেকে এ ধরনের দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়, আর তা অবশ্যই প্রতিরোধযোগ্য।
১৯৪০-এর পর থেকেই সার তৈরিতে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। এটি সাধারণত দলা আকারে থাকে এবং তৈরিতে খরচ বেশ কম। স্বাভাবিক অবস্থায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট স্থিতিশীল হলেও উচ্চ তাপমাত্রায় এটি বিস্ফোরিত হতে পারে। এমন বৈশিষ্টের কারণেই খননশিল্পে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে এবং সন্ত্রাসীরা বোমা তৈরিতেও এ রাসায়নিক ব্যবহার করে।
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণটি ঘটেছিল ১৯৪৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে। ২ হাজার ৩০০ টন সার বহনকারী একটি জাহাজে ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ৫০০ মানুষ। বিস্ফোরণটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এর প্রভাবে ১৫ ফুট উঁচু ঢেউ সৃষ্টি হয়েছিল এবং জাহাজের দেড় টন (১ হাজার ৫০০ কেজি) ওজনের নোঙ্গরটিকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে ছুড়ে ফেলেছিল।
এ দুর্ঘটনার পর থেকেই রাসায়নিক উৎপাদন ও পরিবহনে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়, বিশেষ করে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ক্ষেত্রে অধিক সুরক্ষিত কন্টেইনার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।
তবে এত বিধিনিষেধেও বন্ধ হয়নি রাসায়নিক সম্পর্কিত দুর্ঘটনা। ২০০৪ সালে ইরানে একটি মালবাহী ট্রেনে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে বিস্ফোরণে প্রাণ হারান অন্তত ৩০০ জন। এর তাণ্ডবে ধ্বংস হয়েছিল একটা গোটা গ্রাম। ২০১৫ সালে চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় তিয়ানজিন উপকূলে এক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৭৩ জন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন দমকলকর্মী।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে ২০১৪ সালে একটি জাহাজ থেকে জব্দ করা ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুতকে। ভিডিও ফুটেজে প্রথমে গোডাউনটিতে আগুন ও এরপর ভয়াবহ বিস্ফোরণের চিত্র দেখা গেছে। শহরটির গভর্নর এ দুর্ঘটনাকে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলার সঙ্গে তুলনা করেছেন। যদিও হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমাটির শক্তি ছিল অন্তত ১৫ হাজার টন টিএনটির সমান। বিপরীতে বৈরুতে বিস্ফোরণের শক্তি বড়জোর কয়েকশ’ টন টিএনটির সমান হতে পারে বলে জানিয়েছেন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জেফরি লুইস।
ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী মানবসৃষ্ট অপারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। তখন কানাডার হ্যালিফ্যাক্স বন্দরে বিস্ফোরকবোঝাই একটি জাহাজে দুর্ঘটনাবশত বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত দুই হাজার মানুষ।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/পিআর