বৈরুতে বিস্ফোরণ, ‘নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ’ বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
অডিও শুনুন
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের পূর্বাঞ্চলের আকাশের কালো ধোঁয়া ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৈরুতের পূর্বাঞ্চলের বন্দরে ভয়াবহ দু’টি বিস্ফোরণে ধ্বংসস্তুপের নগরীতে পরিণত হওয়া এই শহরের রাস্তাঘাট পরিষ্কার হচ্ছে। তবে শহরের নানা প্রান্তে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের সৃতিচিহ্ন।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ছোট এক বিস্ফোরণের পর বৈরুতের বন্দরের পাশের একটি ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে দ্বিতীয় বিস্ফোরণে মুহূর্তের মধ্যে আশপাশে কয়েক ডজন ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা ধসে যায়।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেছেন, বৈরুতের এই বিস্ফোরণে ৭৮ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি মানুষ। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বাড়তে পারে প্রাণহানির সংখ্যা। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব এক বিবৃতিতে বলেছেন, বৈরুতের বন্দরে একটি গুদামে ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ ছিল।
গত ছয় বছর ধরে ওই গুদামে এসব বিস্ফোরক মজুদ করে রাখা হয়েছিল। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান বলেছেন, কয়েক বছর আগে এসব বিস্ফোরক দ্রব্য জব্দ করা হয়েছিল। বৈরুতের বাসিন্দারা বলেছেন, বিস্ফোরণের কেন্দ্র থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভবনও কিছু না কিছু হারিয়েছে। কিছু ভবন হয়তো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি, তবে জানালা, দরজা, ব্যালকনি ধসে পড়েছে।
বৈরুত বিস্ফোরণের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, সন্ধ্যা ৬টার কিছুটা পরের ঘটনা। হঠাৎ করেই বৈরুতের বন্দরের পাশে গোলাপী রঙয়ের ধোঁয়ায় আকাশ ছেয়ে যায়। গম্বুজের মতো বিশালাকার ধোঁয়ার কুন্ডলী কিছুক্ষণ ওড়ার পর প্রলয়ঙ্করী শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো নগরী।
অনেকেই মনে করেছিলেন, সম্ভবত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। বিস্ফোরণের পর দেখা যায়, রাস্তায় অসংখ্য গ্লাস পড়ে আছে। কিছু গাড়ি উল্টে গেছে। গাছপালা পুড়ে গেছে। রাস্তায় লেগে আছে রক্তের দাগ।
বিস্ফোরণের পর আহতদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বৈরুতের হাসপাতালগুলোকে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রক্ত সঙ্কট দেখা দিয়েছে। লেবাননের নিরাপত্তা প্রধান আব্বাস ইব্রাহীম বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, তিনি তদন্তের আগেই কোনও মন্তব্য করবেন না। এদিকে, ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এই বিস্ফোরণের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনও ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই।
বৈরুতের গভর্নর মার্কিন সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রথম বিস্ফোরণের পর আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট দ্বিতীয় বিস্ফোরণে নিখোঁজ হয়ে গেছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আমি বৈরুতের আকাশে আগুনের গোলা এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পাই। ভবনগুলোর ব্যালকনি উড়ে গেছে। আকাশচুম্বী ভবনগুলোর জানালার গ্লাস, দরজা ভেঙে মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বন্দর এলাকার আকাশে তিনি ধুসর রঙয়ের ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী দেখতে পান। এর কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরণের বিকট শব্দে পুরো বৈরুত কেঁপে ওঠে। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় আকাশ। শহরের সব ভবনের জানালা ভেঙে পড়েছে। রাস্তায়, বাড়িঘরে শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। এটা পুরোপুরি নারকীয় দৃশ্য। এমন নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ তারা আগে কখনও দেখেননি।
এদিকে, জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, বৈরুতের বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আমরা জানি না আসলে সেখানে কি কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এটা নিছকই দুর্ঘটনা নাকি কারও দুষ্কর্ম তা পরিষ্কার নয়।
এসআইএস/পিআর