পাখির বাসা বাঁচাতে ৩৫ দিন অন্ধকারে যাতায়াত গ্রামবাসীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:২৬ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২০

গ্রামের কমিউনিটি সুইচবোর্ডর মধ্যে বাসা করেছিল একটি পাখি। সেই বাসায় নীল ও সবুজ রঙের ডিমও পাড়ে পাখিটি। সেটা দেখতে পান এক ব্যক্তি। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সেই পাখির বাসার ছবি দেয়া হয়। এরপরেই গ্রামবাসীরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেন, ডিম ফুটে বাচ্চা না বেরনো পর্যন্ত তারা আলো জ্বালাবেন না। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টানা ৩৫ দিন অন্ধকারে যাতায়াত করলেন তারা! দৃষ্টান্তমূলক এই ঘটনা ভারতের তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার একটি গ্রামের।

ভারতীয় গণমাধ্যম এই সময়ের খবরে বলা হয়েছে, এজন্য একমাসের ওপর স্ট্রিটলাইট ব্যবহার করেননি তামিলনাড়ুর শিবাগঙ্গা জেলার পোথাকুড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। বেশ কিছুদিন ধরে একটা ছোট্ট বুলবুলি পাখি গ্রামের কমিউনিটি সুইচবোর্ডের মধ্যে বাসা বাঁধে। তাতে তিনটি ডিমও পাড়ে সে। পাখির বাসা ও ডিম রক্ষা করতে গিয়ে গ্রামবাসীরা টানা ৩৫ দিন রাস্তা অন্ধকার রেখেই যাতায়াত করেন।

কলেজ পড়ুয়া কারুপ্পুরাজা জানান, তার বাড়ির একদম কাছেই রয়েছে কমিউনিটি সুইচবোর্ড। গ্রামে মোট ৩৫টি স্ট্রিটলাইট রয়েছে। সেগুলোর সব সুইচ রয়েছে এখানে। মারাভামঙ্গলমের কাছে সেথাম্বল পঞ্চায়েতের ওই গ্রামের বাসিন্দা সে। তার কথায়, লকডাউন শুরু হতেই আমি দেখি একটি পাখি খড়, গাছের পাতা নিয়ে বক্সের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। যখন বোর্ডের ঢাকনা খুলে দেখি, সেখানে তিনটি ছোট্ট ছোট্ট সুবজ-নীলচে ডিম পেড়েছে পাখিটি।

তখনই গ্রামের যুবরা সিদ্ধান্ত নেন যেভাবেই হোক পাখি ও তার ডিমগুলো রক্ষা করবেন। সেই সিদ্ধান্ত পাকা করতে একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়। যেখানে গ্রামের সব যুবারা তো আছেনই, এ ছাড়া গ্রামের আরও ৩৫ জন রয়েছেন সেখানে। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, পাখিটিকে শান্তিতে বাসার মধ্যে থাকতে দেয়া হোক। ডিম ফুটে ছানা যতদিন না বড় হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এই লড়াইটা চলবে। যেমন ভাবা তেমনই কাজ।

গ্রুপের সকলে রাজি হলেও গ্রামের ১০০ পরিবারকে বোঝানোও ছিল কিছুটা কষ্টকর। বাসা থেকে যতক্ষণ পাখি ও তার ছানাগুলো উড়ে যাচ্ছে, ততদিন কী গ্রামের মানুষেরা অপেক্ষা করবেন? কিছু মানুষ এগিয়ে এলেন, কিছু মানুষ ওই ছোট্ট পাখির জন্য গোটা একমাস আলো নিভিয়ে রাখাটা নির্বোধ আখ্যা দিলেন। কিন্তু তাদেরও কোনোভাবে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন এলাকার যুবক-যুবতীরা। আপাতত ৩৫ দিনের জন্য রাস্তার কোনও আলো জ্বালানো হবে না, এই বিবৃতিতে সকলে রাজি হয়ে যান।

গ্রামের এক বাসিন্দা, সেলভি জানান, এ কদিন ধরে মোবাইলের টর্চ, টর্চ লাইট ব্যবহার করেই কাটিয়েছি। তাতে কোনও অসুবিধা হয়নি।

পাখির আচরণের ওপর লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব ছিল মূর্তি ও কার্তি, দুই ভাইয়ের ওপর। তারা প্রতিদিনই বাক্স খুলে একবার করে দেখে আসত, কী অবস্থায় রয়েছে সকলে। মা পাখি উড়ে যেতেই চোখ রাখত বাসার ওপর। দিনে দিনে একটু একটু করে বড় হচ্ছে পাখির ছানাগুলো। তাদের গায়ে এখন অল্প অল্প ছোট পালক গজিয়েছে। দুটি পাখা গজিয়েছে। মা পাখির মতো রঙও ধারণ করেছে সেগুলো।

তাদের কথায়, ‌‘আমরা প্রতিদিন বাসাটা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। কোনও বিদ্যুতের তার ঝুলে রয়েছে কি না, দেখি। এর মধ্যে অন্য কোনও হামলা হয়েছে কি না, সব দিকেই নজর রাখি আমরা।’

গ্রামবাসীরা জানান, প্রথমে স্থানীয় এক বাসিন্দা পাখির বাসাটি দেখতে পান। তার সন্তানরা সেই বাসাটির ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এরপরেই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, যতদিন না ডিম ফুটে পাখির বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে, ততদিন তারা ওই স্যুইচ বোর্ড ব্যবহার করবেন না।

জেডএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।