রূপান্তরের ফলে আরও সংক্রামক হয়ে উঠছে করোনা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, ১৯ জুলাই ২০২০

বিশ্বব্যাপী এখন যে করোনাভাইরাস তাণ্ডব চালাচ্ছে, এটি উহানে প্রথমবার শনাক্ত হওয়া সেই ভাইরাসের মতো আর নেই। সার্স-কভ-২ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পথেই বদলে ফেলছে নিজের বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞানীদের চোখে করোনাভাইরাসের হাজারও রূপান্তর (মিউটেশন) ধরা পড়লেও এর মধ্যে মাত্র একটিতে ভাইরাসটি তার স্বভাব বদলেছে।

ফলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে- এই রূপান্তর কি ভাইরাসটিকে আরও সংক্রামক বা মানুষের জন্য আরও বেশি প্রাণঘাতী করে তুলছে? এটি কি করোনা ভ্যাকসিনের সফলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে?

বিজ্ঞানীরা কী বলছেন?
সাধারণ ফ্লু ভাইরাসের তুলনায় করোনাভাইরাসের রূপান্তর হচ্ছে বেশ ধীরে। জনসংখ্যা ও ভ্যাকসিনের দিক থেকে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধী হয়ে ওঠার কোনও তাড়াহুড়ো নেই এটির। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণের রীতি অনেকটা একই রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা করোনার উল্লেখযোগ্য একটি রূপান্তরের নাম দিয়েছেন ডি৬১৪জি। এটি সাধারণত ভাইরাসটির প্রোটিনে তৈরি কাটাগুলোতে ঘটে থাকে। উহানে সংক্রমণ ছড়ানোর কিছু পরেই, সম্ভবত ইতালিতে এ ধরনের রূপান্তর প্রথমবার দেখা গিয়েছিল। কিন্তু, এখন বিশ্বের প্রায় ৯৭ শতাংশ নমুনাতেই এই রূপান্তর দেখা যাচ্ছে।

corona-2

রূপান্তরে কি শক্তিশালী হচ্ছে ভাইরাস?
বিজ্ঞানীদের মতে, ভাইরাস ক্রমাগত রূপান্তরিত হতেই থাকে। এটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রজননে যেমন সহায়তা করে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে উল্টো পথে যেতেও দেখা যায়। বাকিরা সাধারণত নিরপেক্ষই থাকে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ডা. লুসি ভ্যান ড্রপের মতে, এগুলো হলো ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির একটি উপজাত। এরা ভাইরাসের আচরণের পরিবর্তন না ঘটিয়ে একইসঙ্গে চলতে থাকে।

সংক্রমণের একেবারে শুরুর দিকেই রূপান্তর শুরু হওয়ায় এটি আরও বেশি বিস্তৃতহারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণেই রূপান্তরটি এত সাধারণ হয়ে উঠছে বলে বিশ্বাস ভ্যান ড্রপের বৈজ্ঞানিক দলের। তবে তাদের এ মতের বিরোধিতাও করছেন অনেকেই।

ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের ডা. থুসান ডি সিলভার মতো অনেক ভাইরোলজিস্টের বিশ্বাস, পূর্ব সংস্করণের তুলনায় ভাইরাসের নতুন সংস্করণটির বিবর্তনীয় সুবিধা রয়েছে বলে পর্যাপ্ত প্রমাণ মিলেছে।

এর ফলে ভাইরাসটি আরও বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে কি না তা নিশ্চিত করার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি জানালেও এ গবেষকের মতে, ‘রূপান্তরগুলো অবশ্যই নিরপেক্ষ নয়’।

corona-3

ল্যাব টেস্টের প্রমাণ
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির জিনোম টেকনোলজি সেন্টারে করোনাভাইরাসের রূপান্তর নিয়ে গবেষণা করছেন ডা. নেভাইল সানজানা ও তার দল। তারা রূপান্তরিত ভাইরাসের সঙ্গে উহানে পাওয়া অরূপান্তরিত ভাইরাসের মধ্যে মানবকোষে সংক্রমণের প্রতিযোগিতা করান। এতে দেখা যায়, করোনার উহান সংস্করণের চেয়ে রূপান্তরিত রূপটিই বেশি সংক্রামক।

ল্যাবের পরীক্ষায় জিতলেও বহির্বিশ্বে মানবদেহে সংক্রমণের ক্ষেত্রে রূপান্তরিত ভাইরাসগুলো কতটা সংক্রামক হবে তা এখনও প্রমাণিত নয় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

তবে, ফ্লোরিডার স্ক্রিপস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মাইকেল ফারজান বলেছেন, এধরনের ‘চিহ্নিত জৈবিক পার্থক্যগুলো’ এটা প্রমাণ করতে যথেষ্ট যে, এই রূপান্তর ভাইরাসটিকে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আরও উন্নত করে তুলছে।

সূত্র: বিবিসি

কেএএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।