মহামারিতেও রমরমা মার্কিন খুচরা বিক্রি
করোনাভাইরাস মহামারিতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রায় থমকে যাওয়ার মতো অবস্থায় চলে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রে গত জুন মাসে পূর্বাভাসের চেয়েও রমরমা ছিল খুচরা বিক্রি। দেশটির বাণিজ্য বিভাগ বলছে, জুনে যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রি পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর দিকের তুলনায় ফের বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং উচ্চ বেকারত্ব তৈরি হওয়ায় মার্কিন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম হুমকির মুখোমুখি হয়েছে।
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তথ্য বলছে, গত মাসে দেশটিতে খুচরা বিক্রি বেড়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে রেকর্ড নথিভূক্ত করার কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে গত মে মাসে দেশটিতে খুচরা বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৮ দশমিক ২ শতাংশ; যা এখন পর্যন্ত বিক্রি বৃদ্ধির সর্বোচ্চ রেকর্ড। তবে এই রেকর্ডের পরই জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাড়ে সাত শতাংশ খুচরা বিক্রি বৃদ্ধি পায়।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স অর্থনীতিবিদদের করা পূর্বাভাসে যুক্তরাষ্ট্রে জুনে খুচরা বিক্রি ৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছিল।
করোনাভাইরাসের বিস্তারের গতি ধীর করার প্রচেষ্টা হিসেবে মার্চের মাঝের দিকে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা ফের কার্যক্রম শুরু করায় বর্তমানে খুচরা বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায়, বিশেষ করে দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কিছু অঞ্চলে কর্তৃপক্ষ আবারও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে দেশটিতে পুনরায় সবকিছু স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা শুরু হয় মে মাসে। মহামারির প্রথম ধকলে বিপর্যস্ত অর্থনীতি খুব বেশি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এখনও। করোনার কারণে দেশটিতে উচ্চ বেকারত্ব তৈরি হয়েছে। ফের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় বেকারত্ব পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন দেশটির অর্থনীতিবিদরা।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের কারণে শাট ডাউন শুরু হওয়ার আগেই গত ফেব্রুয়ারিতে মন্দার কবলে পড়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির এই দেশ। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ সপ্তাহ ১১ জুলাইয়ে দেশটিতে সরকারের অনিয়মিত বেকারত্ব ভাতার জন্য আবেদন করেছিলেন ১ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মানুষ। যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ১ দশমিক ৩১ মিলিয়নের চেয়ে সামান্য কম।
দেশটির অর্থনীতিবিদরা গত সপ্তাহে এই সংখ্যা ১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তবে বেকারত্ব সুবিধার জন্য ইতিহাস সৃষ্টিকারী আবেদন জমা পড়েছিল মার্চে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে বেকারত্ব সুবিধার আবেদন করেছিলেন রেকর্ড ৬ দশমিক ৮৬৭ মিলিয়ন মানুষ।
করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মহীন হয়ে পড়া উদ্যোক্তা, বিভিন্ন খাতের শ্রমিক ও ঠিকাদারদের প্রত্যেক সপ্তাহে ৬০০ মার্কিন ডলার সরকারি সহায়তা দেয়া হয়। তবে এই সুবিধাভোগীরা দেশটির নিয়মিত বেকারত্ব সুবিধার আওতাধীন নন।
করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের দেয়া এই বিশেষ সুবিধাপ্রদান বন্ধ হয়ে গেলে দেশটিতে খুচরা বিক্রি এবং সামগ্রিক ভোক্তা ব্যয় আবারও কমে যেতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন মার্কিন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর মারা গেছেন অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার ২১০ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৩৬১ জন।
এসআইএস/এমকেএইচ