যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাতিল
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অনলাইনে ক্লাস করা বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মঙ্গলবার মার্কিন সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত এক ফেডারেল বিচারক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৬ জুলাই মহামারির কারণে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে সব ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলোর বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল মার্কিন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস বিভাগ (আইসিই)। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় দেশটির শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদদের মধ্যে।
আইসিই’র আদেশের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে প্রথমে মামলা করে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। একই বিষয়ে এ সপ্তাহে মামলা করেছেন অন্তত ১৮টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নররাও।
মঙ্গলবার উভয়ের পক্ষ থেকে বিচারক অ্যালিসন ডি. বারোজ ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে অনলাইনে ক্লাস নেয়া কোনও প্রতিষ্ঠানের কোনও বিদেশি শিক্ষার্থীকেই ফেরত পাঠাবে না যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরতদের বদলে হোয়াইট হাউস এখন থেকে নতুন বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন নিয়ম জারির চিন্তাভাবনা করছে।
কী আদেশ দিয়েছিল আইসিই
চলতি বসন্ত ও গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টারে যেসব ক্লাস অনলাইনে হবে, সেগুলোর বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি সাময়িকভাবে বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিল আইসিই পরিচালিত ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটার প্রোগ্রাম’।
এতে এফ-১ এবং এম-১ ভিসাধারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের অন্তত একটি ক্লাসেও স্বশরীরে উপস্থিত হতে হচ্ছে না, তাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ অথবা অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হতো। এই নিয়মের বাইরে গেলে শাস্তিরও ঘোষণা দেয়া হয়। তবে, এ ভিসা নিষেধাজ্ঞা নতুন শিক্ষাবর্ষে থাকবে না বলে জানানো হয়েছিল।
সমালোচনার ঝড়
আইসিইর এ আদেশের পরপরই এর বিরুদ্ধে সরব হন দেশটির রাজনীতিবিদ-শিক্ষাবিদরা। হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট ল্যারি ব্যাকো এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘আইসিইর জারি করা নির্দেশনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জটিল সমস্যায় ফেলে দিয়েছে, বিশেষ করে অনলাইন প্রোগ্রামগুলোর শিক্ষার্থীদের; দেশত্যাগ বা স্কুল পরিবর্তন ছাড়া তাদের হাতে খুব একটা বিকল্প নেই।’
বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের বিষয়ে ডেমোক্রেটিক সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মহামারি চলাকালীন বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, কারণ তাদের কলেজগুলো সামাজিক দূরত্বের জন্য অনলাইনে ক্লাস চালাচ্ছিল। এটি নির্বোধ, নিষ্ঠুর এবং জেনোফোবিক (বিদেশিদের অপছন্দ করার মানসিক সমস্যা)।’
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করা সাংবাদিক এলিজাবেথ স্পাইয়ার্স জানান, তার অনেক শিক্ষার্থী এই ভিসার ওপর নির্ভরশীল এবং তারা নিজ দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সময়ের পার্থক্যসহ অন্যান্য সমস্যার কারণে অনলাইন ক্লাসে ঠিকমতো যোগ দিতে পারবে না।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি
কেএএ/