সংসদ কার্যকরে টিআইবি’র ১২ দফা
জাতীয় সংসদকে কার্যকর করতে ১২ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি বিরোধী গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রোববার দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশনের কার্যক্রম ওপর টিআইবি’র পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ ভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
টিআইব’র ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফাতেমা আফরোজ এবং মোরশেদা আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে জুন ২০১৪-আগস্ট ২০১৫ পর্যন্ত (দশম সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশন) পরিমাণবাচক এবং গুণবাচক তথ্য সংগৃহীত হয়। প্রত্যক্ষ তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত সংসদ কার্যক্রম এবং টিআইবি’র গবেষণা দলের সদস্য কর্তৃক অধিবেশন সরাসরি পর্যবেক্ষণ। এছাড়া পরোক্ষ তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত বুলেটিন ও কমিটি প্রতিবেদন, সরকারি গেজেট, প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন, বই ও প্রবন্ধ ও সংবাদপত্রের তথ্য ইত্যাদি।
প্রতিবেদনে সংসদীয় গণতন্ত্র সুদৃঢ় করা, সংসদকে কার্যকর করা ও সর্বোপরি সংসদকে জবাবদিহিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে সদস্যদের উপস্থিতি, সংসদে সদস্যদের আচরণ ও অংশগ্রহণ, তথ্য প্রকাশ, সংসদীয় কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, সংসদীয় কমিটি কার্যকর করাসহ মোট ১২ দফা সুপারিশ উত্থাপন করা হয়।
এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- অসংসদীয় আচরণ এবং ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারকে অধিকতর শক্তিশালী ভূমিকা পালন করা; সরকার এবং বিরোধী উভয় পক্ষকে অসংসদীয় আচরণ ও ভাষা পরিহার করা; সংসদে কথিত প্রধান বিরোধীদলকে বিতর্কিত অবস্থান পরিহার করে প্রকৃত ভূমিকা পালন করা; আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে সদস্যদের অধিকতর অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা; প্রশ্নোত্তর ও জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশ পর্বে অধিক সময় বরাদ্দ এবং সদস্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি; অধিবেশনভিত্তিক সর্বোচ্চ উপস্থিতির জন্য স্বীকৃতি প্রদানের চর্চা পুনর্বহাল এবং সর্বনিম্ন উপস্থিত সদস্যদের নাম প্রকাশ করা; আইন প্রণয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ; জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব বাতিল করার ধারাবাহিকতা থেকে বের হয়ে এসে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জনমত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রেরণ করা। এক্ষেত্রে সংসদের ওয়েবসাইট, সংসদ টিভি, বেসরকারি সংস্থা কিংবা সংবাদপত্রের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও অপরাপর সুপারিশসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল জনগণের সাথে সংসদের সরাসরি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য পিটিশন কমিটিকে কার্যকর করা; আন্তর্জাতিক চুক্তিসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়ে সংসদে আলোচনা করার বিধান কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া; কমিটির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত তথ্য পুরোপুরিভাবে যাচাই করা এবং কোনো সদস্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির পর কমিটি-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক স্বার্থ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া গেলে প্রমাণ সাপেক্ষে উক্ত সদস্যকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার বিধান প্রণয়ন এবং সংসদীয় কমিটির সুপারিশসহ কার্যবিবরণী জনগণ তথা সরকারি ও বেসরকারি রেডিও, টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রসহ সকল গণমাধ্যমে সহজলভ্য করা।
এসএ/এসএইচএস/আরআইপি