রাজন হত্যা : নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেন আসামিরা
শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলর যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। রোববার বেলা ২টায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক শুরু করেন।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২ টায় রাজন হত্যা মামলায় আদালতে হাজির থাকা মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামসহ ১১ জনের সকলেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে। এর মধ্যে কামরুলের ভাই আলী হায়দার ও মুহিত আলম হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না দাবি করেন।
রোববার আদালতে ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে সাফাই সাক্ষ্যদেয়ার সময় নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন তারা। যদিও মুহিত আলমকে রাজনের লাশ গুম করার সময় ঘটনার দিন হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেন স্থানীয় এলাকাবাসী। দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও মুহিত হত্যার দায় স্বীকার করেন। এছাড়া নির্দোষ দাবিকারিদের আটজনই হত্যায় দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিল।
সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধার আদালতে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সাফাই সাক্ষ্য প্রদান শুরু করেন আসামিরা।
আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মফুর আলী জাগো নিউজকে জানান, আদালতে হাজির থাকা ১১ আসামির সকলেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে। তবে কেবল আলী হায়দার ও মুহিত আলম ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। রাজন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না বলে দাবি করেন তারা।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মসরুর চৌধুরী শওকত জানান, আসামিদের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বেলা ২টায় যুক্তিতর্ক উপস্থপন শুরু হয়েছে। বেলা সাড়ে ৩টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যুক্তির্ক চলছিলো।
এর আগে রোববার দুপুর পৌনে ১২ টায় মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামসহ ১১জনকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আদালতে হাজির করা হয়।
রোববার আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দেন মামলার প্রধান আসামি শহরতলির কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম, তার ভাই মুহিত আলম ওরফে মুহিত ও আলী হায়দার ওরফে আলী, তাদের চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না, টুকেরবাজার ইউনিয়নের পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের বাসিন্দা ও ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নূর মিয়া, দুলাল আহমদ, আয়াজ আলী, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, ফিরোজ মিয়া, আছমত আলী ওরফে আছমত উল্যাহ ও রুহুল আমিন ওরফে রুহেল।
এই মামলায় কামরুল ছাড়া আরো ১০ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে রাজন হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে কামরুলের ভাই শামীম আহমদ ও জাকির হোসেন পাভেল ওরফে রাজু এখনও পলাতক রয়েছেন।
এর আগে ২১ অক্টোবর কামরুলের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় জেরা করা হয় আলোচিত এই মামলার ১১জন সাক্ষীকে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর পলাতক আসামি সৌদি প্রবাসী কামরুলসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে চার্জগঠন করা হয়। আসামিদের মধ্যে কামরুলের ভাই শামীম ও পাভেল নামের দুজন পলাতক রয়েছেন।
গত ৩১ আগস্ট সৌদি আরবে আটক কামরুলসহ পলাতক ৩ আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়সীমার মধ্যে পলাতকরা আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত বিচারিক কাজ শুরুর লক্ষ্যে মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠান।
গত ২৪ আগস্ট একই আদালত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রফিতারি পরোয়ানা ও মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী পরদিন ২৫ আগস্ট জালালাবাদ থানা পুলিশ ৩ পলাতক আসামির মালামাল ক্রোক করেন।
গত ১৫ অক্টোবর বৃস্পতিবার বিকেল ২টা ৫৭ মিনিটে রাজন হত্যার প্রধান আসামি কামরুলকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। পরে ঢাকা থেকে ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আনা হয়। পরে তাকে রাতে এসএমপির কোতোয়ালী মডেল থানায় রাখা হয়। শুক্রবার সেখান থেকে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ে শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
ছামির মাহমুদ/এসএস/আরআইপি