বাঁ হাতে ব্যাটিং করেন বলে দলে নেওয়া হতো না সাইফউদ্দিনকে

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ১৯ জুন ২০২০

তার দাদা, বাবা আর মা‘র কেউ কখনো বাঁহাতি নন। তিনি নিজেও ক্রিকেটে ব্যাটিং ছাড়া আর সব কাজকর্ম করেন ডান হাতে। লিখেন ডান হাতে, ব্যাডমিন্টন খেলেন ডান হাত দিয়ে। তার ভাষায়, ‘আমার সব কাজ ডান হাতে। শুধু ব্যাটিংটা বাঁ হাতে।’

বলা হচ্ছে দেশের অন্যতম তুখোড় চৌকশ ক্রিকেটার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের কথা। জাতীয় দলের পেস বোলিং এই অলরাউন্ডার শুধু ব্যাটই ধরেন বাঁ হাতে। বোলিং করেন ডান হাতে। এমনকি ফিল্ডিংয়ের পর বলও ছোড়েন ডান হাত দিয়েই।

কিন্তু কেন শুধু ব্যাটিং বাঁ হাতে করা? তার নিজের মনেও জাগে প্রশ্ন, ‘মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করি, আচ আমার সব কিছু ডান হাতে তাহলে বাঁ হাতে কেন ব্যাট করি? বোলিংটা কেন বাঁ হাতে করি না? তাহলে তো বাঁহাতি অলরাউন্ডার হওয়া যেত। ইনজুরি হলে বাঁহাতি স্পিনারের একটা অপশন থাকতো।’

শুধু নিজের প্রসঙ্গ নয়, পরিবারে কেউ বাঁহাতি ছিলেন কি না? পূর্বসূরীদের ভেতর কেউ বাঁ হাতে কাজ করতেন কি না, উৎসাহ নিয়ে সেটাও জানতে চেয়েছিলেন সাইফউদ্দিন। মাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আচ্ছা, আমার বাবা, দাদাদের কেউ কখনো বাঁ হাতে কাজ করতেন?’ সাইফউদ্দিন জানান, ‘মা বলেছেন- না, কেউই বাঁহাতি ছিলেন না। তাহলে আমি শুধু আমিই বাঁ হাতে ব্যাট ধরি কেন? এ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর কেউ দিতে পারেনি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের ইউটিউব লাইভে এসে নিজের খেলোয়াড়ি জীবন, ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাঁ হাতে ব্যাটিং প্রসঙ্গ চলে আসে সাইফউদ্দিনের।

তিনি জানান, ছেলেবেলায় বাঁ হাতে ব্যাট ধরতে শেখা এবং সেই বাঁ হাতে ব্যাটিং করতে গিয়ে বন্ধুদের অসহযোগিতা ও বৈরিতার মুখেও পড়তে হতো। কারণ তার ছেলেবেলার বন্ধুদের ভেতরে আর কেউ বাঁ হাতে ব্যাট করতো না। এতে করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য ফিল্ডিং বদলাতে হতো। বারবার ফিল্ডারদের এদিক থেকে ওদিক যেতে হতো। বন্ধুরা তা করতে দিতে চাইতো না। সে এক মহাবিড়ম্বনা!

সে তিক্ততার গল্প শুনিয়ে সাইফউদ্দিন বলে ওঠেন, ‘এটা ২০০৩ সালের ঘটনা। আমি তখন খুব ছোট। আমার দাদার বাড়িতে থাকি। সেটা গ্রামে। তখন আমি বাঁ হাতে ব্যাট করতাম, তাই পাড়ার বন্ধুরা আমাকে খেলায় নিত না। বলতো বাঁ হাতে ফিল্ডারের পজিশন কে চেঞ্জ করবে? হয় তুই ডান হাতে ব্যাট কর, না হয় খেলতে পারবি না।’

জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার যোগ করেন, ‘তারা বলতো শুক্রবার বড়দের সাথে খেলিস। সেদিন মানুষ বেশি হয়, ঐ দিন তুই সুযোগ পাবি। খুব স্ট্রাগল করতে হতো। এছাড়া বোলিং করতে দিত না। আমি আমার বন্ধুদের চেয়ে বেশ জোরে বল করতাম। তাই বন্ধুরা বোলিংও করতে দিতে চাইতো না। কি যে কঠিন ছিল পরিস্থিতিটা ‘

‘বিকেলে সময় তো কাটাতে হবে। তখন তো আর সময় কাটানোর এত অত্যাধুনিক সব উপাদান মোবাইল, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট এসব ছিল না। আমাদের কিশোর বয়সে সময় কাটাানোর জায়গা ছিল খেলার মাঠ। কিন্তু সেখানে গিয়ে ঐ বিড়ম্বনা। না পারতাম বাঁ হাতে ফ্রি ব্যাটিং করতে। না বোলিং। শুধু ফিল্ডিং করে কাটতো। আর অনিচ্ছাসত্ত্বেও ডান হাতে ব্যাট করতে হতো। আর সপ্তাহে একদিন বড়দের সাথে বাঁ হাতে ব্যাট করার সুযোগ মিলতো।’

এআরবি/এমএমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।