করোনামুক্ত আইসল্যান্ড যখন অনন্য দৃষ্টান্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০৬ এএম, ১৯ জুন ২০২০

বার এবং রেস্টুরেন্টগুলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ। লোকজন বাইরে দল বেধে সময় কাটাচ্ছেন। দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে আইসল্যান্ডে যদি কেউ ঘুরতে গিয়ে ভাবেন যে- তিনি এমন এক সমান্তরাল মহাবিশ্বে এসেছেন যেখানে করোনাভাইরাস কখনই সংক্রমণ ঘটেনি; হয়তো তাকে এই ভাবনার জন্য ক্ষমা করে দেয়া যেতে পারে।

দেশটিতে এখন সবকিছুই স্বাভাবিক হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সফল ইউরোপের এই দেশ। একেবারে শুরুর দিকে অল্প জনসংখ্যার এই দেশটিতে সংক্রমণ বিপর্যয় ডেকে আনে। দেশটির সরকার আগ্রাসী ব্যবস্থায় করোনা সংক্রমিতদের দ্রুত শনাক্ত এবং আলাদা করে ফেলে। করোনা নির্মূলে সক্ষম আইসল্যান্ডের সরকার ১৫ জুন সীমান্ত খুলে দেয়ার আত্মবিশ্বাস পায়।

দু'দিন পর দেশটিতে জাতীয় দিবস যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। রাজধানীর নর্ডিক সড়কে স্থানীয়রা মিলিত হন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন জ্যাকোসদোতির জনতার মুখোমুখি হন। এ সময় কারও মুখে মাস্ক কিংবা সামাজিক দূরত্বের কোনও বালাই ছিল না।

তবে দেশটিতে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদেরকে ফ্লাইটে এবং কেফলাভিক বিমানবন্দরের হলে পৌঁছেও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। সেখানে পৌঁছানোর পর কোভিড-১৯ আক্রান্ত কিনা তা জানার জন্য পর্যটকদের নাক এবং গলা থেকে নমুনা নেয়া হয়।

মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নমুনা পরীক্ষার ফল ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। যদি পজিটিভ ফল আসে, তাহলে পর্যটকদেরকে ১৪ দিনের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। কেউ পরীক্ষা না করে সরাসরি কোয়ারেন্টাইনে যেতে চাইলে সেই সুযোগও পাবেন। তবে পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলে পর্যটকরা কোনও ধরনের বিধি-নিষেধ ছাড়াই আইসল্যান্ডে ঘুরতে পারবেন।

আইসল্যান্ডের স্ক্রিনিং এবং কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং ব্যবস্থা এতটাই উন্নত যে- বিশ্বে করোনাভাইরাসে সর্বনিম্ন মৃত্যুর রেকর্ড যেসব দেশের রয়েছে আইসল্যান্ড তাদের একটি। যুক্তরাজ্যে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৪৪০ জন মারা গেলেও আইসল্যান্ডে সেই সংখ্যা লাখে মাত্র তিনজন।

আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো- ইউরোপে শুরুর দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের অন্যতম সর্বোচ্চ হার ছিল এই দেশটির। যুক্তরাজ্যে যেখানে প্রতি লাখে ৪৫০ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন; সেখানে আইসল্যান্ডে তা ছিল ৫১৩ জন।

রাজধানী রিকজাভিকের বেসরকারি একটি ল্যাব ডিকোড। এই ল্যাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যারি স্টিফেনসন। তার এই ল্যাব আইসল্যান্ডের সব কোভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করেছে। সিএনএনকে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভাইরাসটির রূপান্তর শনাক্ত করায় তা মোকাবিলায় সফলতা এসেছে।

স্টিফেনসন বলেন, নতুন একটি অঞ্চলে যখন ভাইরাস পৌঁছায় তখন এটি বিক্ষিপ্তভাবে রূপান্তরিত হতে থাকে। আইসল্যান্ডের প্রত্যেকের কাছে পাওয়া ভাইরাসটির আমরা সিকোয়েন্স করেছি। আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি ভাইরাসটির রূপান্তর কোথায় থেকে ঘটেছে।

তখন আমরা সমাজে এর বিস্তার অনুসরণ করতে পেরেছি। পরে সব তথ্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারা ভাইরাসটির সংস্পর্শে এসেছেন এমন মানুষদের শনাক্ত করার কাজে এসব তথ্য ব্যবহার করেন।

এভাবে সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টায় করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল আইসল্যান্ড এখন বাইরের বিশ্বের জন্য ধীরে ধীরে খুলে দেয়া হচ্ছে। দেশটির অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি পর্যটন শিল্প। গত বছর দেশটির অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান ছিল প্রায় ৮ শতাংশ। ইউরোপীয় পর্যটকদের জন্য ১৫ জুন থেকে সীমান্ত খুলে দেয়া হলেও অন্যান্য দেশের জন্য এখনও তা বন্ধ রয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল আইসল্যান্ড এখন অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ।

এসআইএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।