গালওয়ান ভ্যালি: পর্বতচূড়ায় ঠান্ডা ও বৈরী এক যুদ্ধক্ষেত্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:১০ পিএম, ১৮ জুন ২০২০

লাদাখের গালওয়ান নদী ঘেঁষা উপত্যকায় সোমবার রাতে চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ভারতের ২০ জন সৈন্য নিহত হয়েছেন। বিশ্বের জনবহুল ও সৈন্যসামন্তের সংখ্যাও অন্যতম বৃহত্তম দেশ দুটি পর্বতচূড়ায় বড় সংঘর্ষের আগে কয়েক সপ্তাহ যাবৎ ছোট ছোট বিবাদে জড়িয়েছে।

কিন্তু সংকট চরমে ওঠে যখন একটিও গুলি বিনিময় না করেও ভারতের ২০ জন সৈন্য নিহত হন, যদিও চীনের হতাহতের সংখ্যা এখনো প্রকাশ করেনি দেশটি। সংঘাতের কথা স্বীকার করে দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ এনেছে।

সংঘাতস্থলটি দুই দেশের মধ্যকার ডি-ফ্যাক্টো সীমান্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) অবস্থিত। উভয় দেশের মধ্যে ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটারের সীমান্ত সংযোগ রয়েছে এবং সীমানা ও ভূখণ্ড নিয়ে তাদের বিবাদও বেশ পুরনো।

বৈরি পরিবেশ

এই গালওয়ান উপত্যকার আবহাওয়া অত্যন্ত বৈরি, সেইসঙ্গে এর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরে। জায়গাটা এলএসি-র পশ্চিম অংশে আকসাই চিনের কাছে অবস্থিত, চীন নিয়ন্ত্রিত ওই বিতর্কিত জায়গার মালিকানা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে ভারত।

স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দুই দেশের সৈন্যরা যে খাড়া শৈল-প্রবাহের ওপর দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছেন, কিছু সৈন্য পিছলে খরস্রোতা গালওয়ান নদীতে পড়ে গেছেন, যেখানে পানির তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে।

Golwan

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতীয় সেনাবাহিনী নিশ্চিত করে, যারা নিহত হয়েছেন, তাদের ১৭ জনই গুরুতর আহত ছিলেন, যারা সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ১০ হাজার ফুট উঁচুতে হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ধারণা করা হচ্ছে, এদের কেউ কেউ আঘাত নিয়ে হিমশীতল আবহাওয়ায় টিকতে না পেরে মারা গেছেন। লাদাখ ভারতের সবচেয়ে উঁচু মালভূমি এবং শীতল প্রান্তর। শীতকালে যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি হয়ে যায়।

সেখানকার পাহাড়ি ঝর্ণা ও জলাভূমি, এবং কিছু ঢাল ও অল্প পরিমাণ সমতল জমি ছাড়া বেশিরভাগ অংশের বালিমাটিতে কোন গাছপালা হয় না।

মৃত্যুর কারণ

লাদাখের উচ্চতায় মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে ফ্রস্টবাইট বা ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া, চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে হাই-অল্টিচ্যুড পালমোনারি ওডেমা বলা হয়; যা মূলত উচ্চতাজনিত কারণে বাতাসে অক্সিজেন কম থাকা এবং প্রবল ঠাণ্ডার কারণে হয়।

আরেকটি কারণ হচ্ছে হাই-অল্টিচ্যুড সেরেব্রাল ওডেমা, যা হয় উঁচু এলাকায় ভ্রমণের কারণে শারীরিক প্রতিক্রিয়ার ফলে মস্তিষ্ক থেকে একধরনের জলীয় পদার্থ নিঃসরণের কারণে হয়। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমন বৈরি পরিবেশ হওয়ার কারণেই ঐতিহ্যগতভাবে এলএসি-র ওই এলাকাটি শান্তিপূর্ণ।

কিন্তু ১৯৬২ সালের পর হঠাৎ এলাকাটির পরিবেশ মঙ্গলবারের মত প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার কারণ কী?

মে মাসে ভারতের একজন সামরিক বিশ্লেষক অজয় শুক্লা বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘গলওয়ান উপত্যকা ক্রমেই হটস্পট হয়ে ওঠার কারণ হচ্ছে, ওখানেই ভারত সম্প্রতি লাদাখের একেবারে প্রত্যন্ত ও নাজুক এলাকায় একটি নতুন রাস্তা বানিয়েছে।’

কয়েকশশো কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি ২০১৯ সালে বানানো হয়, এবং সেটিকে মালভূমির ওপরে একটি বিমান ঘাঁটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। দাউলাত বেগ ওল্ডির ওই বিমানঘাঁটিটিকেও নতুন করে চালু করা হয়, এই বিমানঘাঁটিটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থানরত বিমানঘাঁটি।

ভারতের এই স্থাপনার ব্যাপারে শুরু থেকেই চীন সন্দিহান। বেইজিংয়ের সন্দেহ ওই রাস্তা দিয়ে দিল্লি সহজেই সীমান্ত এলাকায় সৈন্য এবং মালামাল পাঠাতে পারবে। মে মাসে সীমান্তের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে চীনা সৈন্যবহর তাঁবু খাটায়, পরিখা খনন করে এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র এনে জড়ো করে।

সেই সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সোমবার রাতের প্রাণহানির পর এই মুহূর্তে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজছেন।

সূত্র: বিবিসি 

এসএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।