সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি
দেশে মোবাইল ফোনের বিস্তার ঘটেছে অতিদ্রুত। এটা অবশ্যই আশার দিক কিন্তু এর উল্টো পিঠে হতাশা বা উদ্বেগেরও একটি চিত্র আছে। সেটি হচ্ছে নিবন্ধন ছাড়াই মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহার। এরফলে নানা ধরনের অপরাধ কর্ম বাড়ছে। বিশেষ করে নিবন্ধনহীন সিমের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণের টাকা আদায়, নারী নির্যাতনসহ নানা অপকর্ম হচ্ছে। জঙ্গিবাদের বিস্তারেও নিবন্ধনহীন ভুয়া সিম ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দিন দিন মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। এরসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভুয়া সিমের সংখ্যা। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
সিম নিবন্ধন যাচাই করতে গিয়ে এমনও দেখা গেছে- একটি ‘ভুয়া’ জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ১৪ হাজার ১১৭টি সিম তোলা হয়েছে। এটি ভাবা যায়! শুধু তাই নয়, গ্রাহকের হাতে থাকা প্রায় ১৩ কোটি সিমের মধ্যে মাত্র ১ কোটির তথ্য সরকার হাতে পেয়েছে। তবে এর মধ্যেও ৭৫ শতাংশই সঠিকভাবে নিবন্ধিত নয়। সঠিকভাবে নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ২৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮০টি। মোবাইল ফোন কোম্পানি গুলোর কাছেও লাখ লাখ গ্রাহকের সঠিক কোনো তথ্য নেই। ফলে ভুয়া সিম ব্যবহার করে অপরাধকর্ম সংঘটিত হলেও অপরাধীকে সনাক্ত করা যায় না। জঙ্গিবাদের কাজে ভুয়া সিম ব্যবহৃত হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও এটা হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় নিবন্ধনহীন সিম যাতে আর ক্রয়-বিক্রয় না হয় সেদিকে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো বাধ্য করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই। আশার কথা হচ্ছে, সরকার আঙ্গুলের ছাপ বা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ভুয়া সিম সংক্রান্ত আর কোনো দুশ্চিন্তা বা জটিলতা থাকবে না।
গত বুধবার সকালে আঙ্গুলের ছাপ বা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।এদিন সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নিজেই আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে এ পদ্ধতির উদ্বোধন করেন তিনি। আগামী ১ নভেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রাহকরা কাস্টমার কেয়ার থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। আর ১৬ ডিসেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করবেন অপারেটররা। ভুয়া পরিচয় এবং নিবন্ধন না করে সিম কিনে অপরাধীদের ব্যবহার ঠেকাতে গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও সিম পুনঃনিবন্ধনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।
যে কোনো মূল্যে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। মোবাইল অপারেটরদের পাশাপাশি গ্রাহক সচেতনতাও এক্ষেত্রে জরুরি। যেখানে ল্যান্ড ফোনের একটি সংযোগ নিতে গেলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া সম্ভব হয় না সেখানে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধহীন অবস্থায় বিক্রি করা হবে-এটা একেবারেই ঠিক নয়। যারা এভাবে সিম সংগ্রহ করবেন তাদের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। কাজেই জাতীয় নিরাপত্তা এবং মোবাইল কোম্পানি এবং গ্রাহকদের সবার অভিন্ন স্বার্থ রক্ষায় প্রতিটি সিমের নিবন্ধন করাই হবে যুক্তিযুক্ত। এ বিষয়ে সবাই এগিয়ে আসবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
এইচআর