১২৯ বছর পর সাইক্লোনের কবলে মুম্বাই
প্রায় ১২৯ বছর পর ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাই সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়ছে কোনো সাইক্লোন। নিসর্গ নামের এই সাইক্লোনটি মহারাষ্ট্র ছাড়াও গুজরাট রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানবে। ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে এটি ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়া দফতরের বরাতে এনডিটিভি ও বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ১৮৯১ সালের পর মুম্বাইয়ে আঘাত হানতে যাওয়া প্রথম সাইক্লোন নিসর্গের গতি হবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হবে ভারী বৃষ্টিপাত। ইতোমধ্যেই রাজ্যের থানে, রায়গড়, রত্নগিরি এবং সিন্ধুদুর্গ এলাকায় উচ্চ সতর্কতা (হাই অ্যালার্ট) জারি করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের উপকূলে ধেয়ে আসা নিসর্গ আরও শক্তি সঞ্চয় করে চলেছে। এর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে। আবহওয়া দফতর বলছে বুধবার মুম্বাই উপকূল ও স্থলভাগে প্রবল গতিতে আঘাত হানতে পারে নিসর্গ।
মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী মোদি টুইটে লিখেছেন, ‘ভারতের পশ্চিম উপকূলে ধেয়ে আসা সাইক্লোন পরিস্থিতির খোঁজ নিলাম। সবার মঙ্গল কামনা করি। আমি সবাইকে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ সাইক্লোনের পরিস্থিতি নিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের কেন্দ্রীয় আবহওয়া দফতর জানায়, ‘আগামী কয়েক ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর দিকে ধেয়ে আসতে পারে, তারপর উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে বাঁক নিতে পারে এবং উত্তর মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ গুজরাট উপকূল দিয়ে মহারাষ্ট্রের আলিবাগ সংলগ্ন স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে ৩ জুন বুধবার।’
মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট উপকূলবর্তী সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে দেশটির জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এর ৩০টি দল মোতায়েন করা হয়েছ। প্রতিটি দলে রয়েছেন ৪৫ জন করে কর্মী। অতিরিক্ত ৫টি দল পাঠানোর অনুরোধ করেছে গুজরাট। মহরাষ্ট্রেও আরও ৬ টি দল প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান এনডিআরএফ প্রধান।
ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার। কাঁচা বাড়িতে বসবাস করা লোকজনদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘মুম্বাই শহরে বসবাসরত বস্তিবাসীদের, বিশেষ করে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানো হয়েছে।’
যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় করোনার জন্য ব্যবহৃত নয় এমন হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ঘাটতি মেটাতেও পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি পালঘরের নিউক্লিয়ার প্রকল্প নিয়েও সতর্কতা অবলম্বন করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, ভারতে করোনার সংক্রমণে সবচেয়ে বিপর্যস্ত রাজ্য হলো মহারাষ্ট্র।
মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেক বলা হয়েছে, ‘ভূমিধস, ভারি বৃষ্টি বা গাছ উপড়ে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় দল তৈরি করা হয়েছে।’ মহারাষ্ট্র সচিবালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ (কন্ট্রোল রুম) খোলা হয়েছে। সবসময় সেটি খোলা থাকবে। সমন্বয় রাখতে বলা হয়েছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী ছাড়াও আবহাওয়া দফতরকে।
এদিকে গুজরাটের ভালসাড় ও নবসারি জেলার ৪৭টি গ্রামের বিশ হাজারের বেশি মানুষকে অন্যত্র সরানো হয়েছে। এরমধ্যে ভালসাড়ে ৩৫টি গ্রামের ১০ হাজার এবং পার্শ্ববর্তী নবসারি জেলার ১২টি গ্রামের ১০ হাজার ২০০ লোককে নিরাপদ স্থানের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা দুটির প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া মৎস্যজীবী ও পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে বন্দরে ফেরার ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য ভারতীয় উপকূল বাহিনীর জাহাজ ও বিমান মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে ভারতে। মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে সেখানে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩৬২। চাপে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বিভাগ ও হাসপাতালগুলো।
দু সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে এটি ভারতে দ্বিতীয় সাইক্লোন। গতমাসে বঙ্গপোসাগরে তৈরি হওয়া অতি প্রবল ঘুর্ণিঝড় আমফান বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানে। তাতে ভারতে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা লক্ষাধিক।
সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি
এসএ