‘ঐতিহাসিক’ যাত্রায় মহাকাশের পথে স্পেসএক্স-নাসার রকেট
ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়া আর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বাধা পেরিয়ে অবশেষে সফলভাবে উড্ডয়ন করল বিশ্বের প্রথম মনুষ্যবাহী বেসরকারি মহাকাশযান। যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ২২ মিনিটে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে নাসা-স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেট।
টানা নয় বছর পর প্রথমবার নিজেদের মাটি থেকে মহাকাশযান পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র। এ যাত্রায় অংশ নিয়ে ইতিহাসের সঙ্গী হয়েছেন দুই নভোচারী রবার্ট বেহনকেন ও ডগলাস হার্লে।
এর আগে, গত বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩৩ মিনিটে ফ্লোরিডা থেকে উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল রকেটটি। তবে বাজে আবহাওয়ার কারণে উড্ডয়নের মাত্র ১৬ মিনিট আগে এর যাত্রা স্থগিত করা হয়।
সেদিন রকেট উৎক্ষেপণ দেখতে ফ্লোরিডা হাজির হয়েছিলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও তার স্ত্রী কারেন। যাত্রা পণ্ড হওয়ায় তখন নিরাশ হয়েই ফিরতে হয়েছিল তাদের।
শনিবারের মহাকাশযাত্রা দেখতে অবশ্য আবারও হাজির হয়েছিলেন ট্রাম্প ও পেন্স। এবার আর নিরাশ হতে হয়নি। স্বচক্ষে দেখেছেন ঐতিহাসিক রকেট উড্ডয়ন।
স্পেসএক্সের রকেটযাত্রার পর আনন্দে আত্মহারা ট্রাম্প বলেন, ‘এই দৃশ্য ছিল খুবই দৃষ্টিনন্দন। আশা করি সবাই তা উপভোগ করেছেন।’
অবশ্য এদিনও বেশ ঝুঁকির মুখে ছিল ফ্যালকন ৯-এর মহাকাশযাত্রা। আকাশে ঘন মেঘ আর বজ্রপাতের আশঙ্কার কারণে ৫০ শতাংশ সম্ভবনা ছিল এর উড্ডয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ার। তবে যাত্রার ৪৫ মিনিট আগেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় আর অপেক্ষা করতে হয়নি।
ডেমো টেস্ট-২
সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথ ভ্রমণের ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। নিজস্ব মালিকানার বদলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মহাকাশ যান ব্যবহারের দিকেই আগ্রহ তাদের। এক্ষেত্রে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স-ই হচ্ছে প্রথম প্রতিষ্ঠান যারা এ সুযোগ নিচ্ছে।
স্পেসএক্স ও নাসার এই মহাকাশযাত্রার নাম দেয়া হয়েছে ডেমো টেস্ট-২। উড্ডয়নের মাধ্যমে মাত্র এর প্রথমধাপ শেষ হলো। এরপর নভোচারীরা আইএসএসে অবতরণ করবেন, সেখানে কাজ শেষে আবার পৃথিবীর উদ্দেশে যাত্রা এবং ফ্লোরিডা উপকূলে আটলান্টিক সাগরে নামবেন।
জানা যায়, উড্ডয়নের ১২ মিনিটের মাথায় নাসার দুই নভোচারীকে নিয়ে ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলটি নির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করে। আগামী ১৯ ঘণ্টা ক্রু ড্রাগনের পরিবেশ, লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম, ঝাঁকি, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
নাসার প্রশাসক জিম ব্রিডেনস্টাইন বলেন, ‘অবতরণের আগে আমাদের যা প্রয়োজন তা হচ্ছে, নভোচারীদের বিশ্রাম। একবার তারা আইএসএসের সীমায় পৌঁছালে নিজেরাই মহাকাশযানটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অটোমেটিক নয়, তারা নিজেরাই এটি করবেন। কারণ তারা টেস্ট পাইলট। যানটি বিজ্ঞাপনে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে পরিচালিত হয় কি না তা পরীক্ষা করবেন পাইলটরা।’
রোববার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবতরণ করার কথা রয়েছে বেহনকেন ও হার্লের। তারা সেখানে ছয় সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন। এরপর ডেমো-২ মিশন শেষ করতে আবারও পৃথিবীতে ফিরবেন নভোচারীরা।
২০১১ সালে স্পেস শাটল কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর টানা নয় বছর নিজস্ব যানে মহাকাশযাত্রা বন্ধ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। এতদিন এই কাজে রাশিয়ার সোয়ুজের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে তাদের। সেজন্য স্পেসএক্সের মহাকাশযাত্রা মার্কিনিদের কাছ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: ডেইলি মেইল, আল জাজিরা
কেএএ/পিআর