আজ ১১ সাক্ষীকে জেরা করবেন কামরুলের আইনজীবী
শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার ১১ সাক্ষীকে পুনরায় জেরা করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামি কামরুলের আইনজীবী আলী হায়দার ফারুকের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় জেরার অনুমতি দেন মহানগর দাযরা জজ মো. আকবর হোসেন মৃধা। আজ (বুধবার) থেকে তাদের জেরা শুরু হবে।
রাজনের বাবার আইনজীবী মসরুর আহমদ চৌধুরী শওকত জাগো নিউজকে জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় মঙ্গলবার ছিল আসামি পরীক্ষা ও সাফাই সাক্ষী। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সকল আসামিকে কঠোর নিরাপত্তায় কাঠগড়ায় হাজির করা হয়।
ওই সময় কামরুলের আইনজীবী আলী হায়দার ফারুক ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ ধারা অনুযায়ী ১৫ জন সাক্ষীকে পুনরায় জেরা করার আবেদন করেন। আদালত তা নামঞ্জুর করলে কামরুলের আইনজীবী চারজন কমিয়ে ১১ জন সাক্ষীকে পুনরায় জেরার আবেদন জানান। পরে এ বিষয়ে শুনানি শেষে মহানগর জজ কামরুলের আইনজীবীর এ আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে মঙ্গলবারও কামরুলকে আদালতে হাজির করার সময় কয়েক শত ক্ষুব্ধ জনতা কামরুলের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন ও তাকে জুতা প্রদর্শন করে ঘৃণা প্রকাশ করেন। এ সময় আদালতপাড়ায় ক্ষুব্ধ জনতা কামরুলসহ সব আসামির ফাঁসি চাই স্লোগান দিতে থাকেন।
গত ১৮ অক্টোবরও সৌদি থেকে নিয়ে আসা মামলার প্রধান আসামি কামরুলকে আদালতে হাজির করার সময় কয়েক শতাধিক ক্ষুব্ধ জনতা তাকে লক্ষ্য করে জুতা ছুঁড়ে বিক্ষোভ দেখান। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর আসামি পক্ষের আইনজীবী প্রধান আসামি কামরুলেরর উপস্থিতিতে ৩৬ সাক্ষীর পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের আবেদন জানিয়েছিলেন। আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করেছিলেন।
মঙ্গলবার মামলার শুনানিকালে আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন মামলার প্রধান আসামি শহরতলির কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম, তার ভাই মুহিত আলম ওরফে মুহিত ও আলী হায়দার ওরফে আলী, তাদের চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না, টুকেরবাজার ইউনিয়নের পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের বাসিন্দা ও ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নুর মিয়া, দুলাল আহমদ, আয়াজ আলী, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, ফিরোজ মিয়া, আছমত আলী ওরফে আছমত উল্লাহ ও রুহুল আমিন ওরফে রুহেল।
গত ২২ সেপ্টেম্বর পলাতক আসামি সৌদি প্রবাসী কামরুলসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে চার্জ গঠন করা হয়। আসামিদের মধ্যে কামরুলের ভাই শামীম ও পাভেল নামের দুজন পলাতক রয়েছেন।
গত ৩১ আগস্ট সৌদি আরবে আটক কামরুলসহ পলাতক তিন আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়সীমার মধ্যে পলাতকরা আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত বিচারিক কাজ শুরুর লক্ষ্যে মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠান।
গত ২৪ আগস্ট একই আদালত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী পরদিন ২৫ আগস্ট জালালাবাদ থানা পুলিশ ৩ পলাতক আসামির মালামাল ক্রোক করে।
এদিকে, গত বৃস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল ২টা ৫৭ মিনিটে রাজন হত্যার প্রধান আসামি কামরুলকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। পরে ঢাকা থেকে ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আনা হয়। পরে তাকে রাতে এসএমপির কোতোয়ালী মডেল থানায় রাখা হয়। শুক্রবার সেখান থেকে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ে শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
ছামির মাহমুদ/বিএ