বিচারকের বিরুদ্ধে জিডি করলেন এক সঙ্গীত শিল্পী
সাতক্ষীরা জজশিপের সাবেক সহকারী জজ (বর্তমান রাজশাহী জর্জশিপের সহকারী জজ) সুব্রত কুমার মল্লিকের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে।
সোমবার রাতে আশাশুনি উপজেলার বেউলা গ্রামের কার্তিক চন্দ্র মুখার্জীর মেয়ে জজের স্ত্রী পরিচয় দানকারী সঙ্গীত শিল্পী চৈতালী মুখার্জী বাদী হয়ে ডায়েরিটি করেন।
চৈতালী মুখার্জী জিডিতে উল্লেখ করেন, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের লক্ষ্মীকান্ত মল্লিকের ছেলে সুব্রত কুমার মল্লিকের সঙ্গে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর হিন্দু ধর্ম মতে আমার বিয়ে হয়। গত ৩ মাস যাবৎ স্বামী আমাকে নানা অজুহাতে মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে। আমার থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে। আমি তার এসব কর্মকাণ্ডের সম্মতি না দিলে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
১২ অক্টোবর দুপুরে আমার ফোনে কল করে সুব্রত মল্লিকের মামা পরিচয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি আমাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ জীবননাশের হুমকি প্রদান করে। আমার মেয়ে পুষ্পিতা চক্রবর্তী অর্পাকে (৮) অপহরণ করে হত্যার হুমকি দেয়। এছাড়া আমার স্বামী তার ব্যবহৃত নম্বর হতে আমাকে ফোন করে বলে, তুমি যদি আমার জীবন থেকে সরে না যাও তাহলে তোমাকে এবং তোমার মেয়েকে খুন করবো।
জিডিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ১৮ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতের দ্বিতীয় তলায় কনফারেন্স রুমে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হয়। সেখানে আমি আমার স্বামীর বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছি। তদন্তকালে বাগেরহাটের বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়া হায়দার এবং সাতক্ষীরার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আকরাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তদন্তকালীন সময়ে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে।
জানা গেছে, সাতক্ষীরা জজকোর্টের অ্যাডভোকেট সৈয়দ একলেছার আলী বাচ্চু গত ২০ জানুয়ারি তৎকালীন সাতক্ষীরার দেবহাটা সহকারী জজ আদালতের বিচারক সুব্রত কুমার মল্লিকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সাতক্ষীরা জজশিপের বিচারক (বর্তমানে রাজশাহী জজশীপের সহকারী জজ) সুব্রত কুমার মল্লিক একজন বিবাহিত ব্যক্তি হওয়া সত্বেও সম্প্রতি সঙ্গীত শিল্পি (এক সন্তানের মা) চৈতালি মুখার্জীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে প্রায়শ রাত্রিযাপন করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ জানুয়ারি রাত পৌনে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ রোডের ভাই ভাই মেসের সামনের একটি বাড়িতে সদর থানার পুলিশের একটি বিশেষ দল সেখানে হানা দিলে সুব্রত মল্লিক সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। বিষয়টি ওই সময় এলাকায়, আদালত পাড়ায় এবং সমগ্র সাতক্ষীরায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
অ্যাডভোকেট সৈয়দ একলেছার আলীর ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক সুব্রত কুমার মল্লিকের বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। যার মামলা নং ০১/২০১৫। গত ১৮ অক্টোবর বিভাগীয় ওই মামলার তদন্তের জন্য বাগেরহাটের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়া হায়দার ঊধ্বর্তন মহলের নির্দেশে সাতক্ষীরায় এসে ঘটনা তদন্ত করেন।
এ ব্যাপারে সুব্রত কুমার মল্লিক জাগো নিউজকে জানান, তিনি পরিস্থিতির শিকার। জোরপূর্বক তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়।
তিনি আরও বলেন, চৈতালীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় সাতক্ষীরা জজশিপের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনকে কেন্দ্র করে। তিনি একজন সঙ্গীত শিল্পী। তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়নি। আমার বিবাহিত স্ত্রী রয়েছে। আমি তার প্রতারণার শিকার।
অন্যদিকে, সঙ্গীত শিল্পী চৈতালী মুখার্জি জাগো নিউজকে বলেন, জর্জ সুব্রত কুমার মল্লিক আমার স্বামী।
এমএএস/আরআইপি