নেই কর্পোরেট অত্যাচার


প্রকাশিত: ১২:৪২ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৫

লালন মেলায় (স্মরণোৎসব ও দোল উৎসব) এবারে ছিল না কর্পোরেট অত্যাচার। গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে ২০১০ সালের পর থেকে লালন মেলায় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করে আসলেও এবারে দেখা গেছে ভিন্নতা।

রঙিন আলো আর কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুনে ভরে যেত লালন চত্বর।  গোটা কুষ্টিয়া শহরই ছেয়ে যেত এসব ব্যানার-ফেস্টুনে। দেখে বোঝার জো থাকে না যে, লালন মেলা নাকি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য বেচাকেনা।

লালন দর্শন আর কর্পোরেট দর্শনের মধ্যে যে পরস্পর বিরোধিতা রয়েছে, অমন বাড়াবাড়ি আয়োজনে তা-ও আড়ালে পড়ে যেত। সাধকদের বসার স্থান, যাতায়াতের রাস্তা, শিল্পী নির্বাচন, গান নির্বাচন সবই করে দিত ওই প্রতিষ্ঠানগুলো। এবার তা ছিল না।

কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে না বলা হয়েছে গত দোল উৎসবে। কী কারণে মেলায় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি, তা লালন একাডেমি নির্দিষ্ট করে না বললেও ধারণা করা হয়, নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই তারা বিনিয়োগ করতে চাইছে না। তবে এর পেছনে অন্য কারণও আলোচনায় আছে। খোদ আয়োজকদেরই কেউ কেউ কর্পোরেট সহযোগিতা নিতে চায় না।

মেলার ঢং-ঐতিহ্য নষ্ট হয় বিধায় অনেকে আগে থেকেই বিরোধিতা করে আসছিল। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো না থাকায় এতে আয়োজকদের কারো কারো কপালে ভাঁজ পড়লেও সাধকেরা শাপে বর মনে করছেন।

সাধক বিমল দাস বাউল বলেন, ‘উৎপাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। ৪০ বছর থেকে সাঁইজিকে স্মরণ করতে আসি। গত কয়েক বছরে বাড়াবাড়ি রকমের আয়োজনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম। এটি আমাদের প্রাণের মেলা, সাধক-বাউলরাই এ মেলার প্রাণ। সাধকদের বিরক্ত করে মেলা হতে পারে না। এবারে কোনো কোম্পানি আসেনি। ভালো লাগছে। সবাই নিজের মতো করে গাইছে, চলছে।’

রাত ভারি হচ্ছে, বিমল দাস বাউলের কথা যেন সত্যি ফলছে। সাধকরা গাইছেন, সাধকরাই শুনছেন। মঞ্চে যারা গাইছেন তারাও মেলার ঢংয়ে তাল রেখেই গাইছেন। প্রবীণ-নবীন শিল্পীদের মিলনমেলায় চারিদিকে ‘জয় গুরু, জয় গুরু’ ধ্বনিত হচ্ছে।

লালন শিল্পী কোহিনুর আক্তার গোলাপি তার প্রতিক্রিয়ায় বলছিলেন, ‘আখড়াবাড়ির পাশেই আমার বাড়ি। লালন একাডেমিতেই গান শিখেছি। বলতে পারেন, এখানেই বড় হয়েছি। এখানকার অনেক কিছুরই পরিবর্তন দেখলাম। তবে লালন মেলায় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ একেবারেই বেমানান লাগছিল। প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝলকানো আলোতে নিজেদের প্রাণ প্রদীপ নিভে যাওয়া অবস্থা। এটি তো অন্য আর দশটির মেলার মতো ভাবলে চলে না। এর নিজস্ব রূপ আছে, স্বকীয়তা আছে। সেই স্বকীয়তা বিনষ্ট করে লালনের মেলা হতে পারে না। কর্পোরেট অত্যাচার না থাকায় মেলায় এবার প্রাণ এসেছে।

এএসএস/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।