হঠাৎ লন্ডন মিশনে ভিপি সাইফুল


প্রকাশিত: ১১:৫৭ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৫

আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম। নিজের পদ ধরে রাখতে কমিটি গঠনের ঠিক আগ মুহূর্তে তার হঠাৎ লন্ডন সফর নানা আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা বলছে বিএনপির দুর্গ খ্যাত বগুড়ায় এখন সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি। একাধিক মামলা নিয়ে নেতাকর্মীরা এখন ফেরারি। তাছাড়া দলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। এই মুহূর্তে দলকে সুসংগঠিত না করে নিজের পদ বাঁচাতে ভিপি সাইফুলের লন্ডন মিশন ভালোভাবে নিচ্ছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

এদিকে, বিষের বাঁশি নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে দেয়া স্টেটাস বগুড়া বিএনপির রাজনীতিতে বড় ধরনের নাড়া দিয়েছে। বিষের বাঁশি তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন ঠিক এভাবে, `নাম তার ভিপি সাইফুল ইসলাম। উনি বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি। এর বাহিরেও রয়েছে ওনার আরো অনেক পরিচয়। ওনার ক্ষমতার দৌড় অনেক দীর্ঘ ! উনি নিজেকে কখনও পরিচয় দেন বগুড়ায় তারেক জিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে, কখনও পরিচয় দেন তারেক জিয়ার ভাই হিসেবে, কখনও বা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তৃতীয় ছেলে হিসেবে ! তাই বগুড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে উনি এক মূর্তিমান আতঙ্ক! উনি যার কাঁধে হাত রাখেন তিনি নেতা হয়ে যায়।

আর যার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নেন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়! তাই নেতাকর্মীরা এখন ভালোভাবেই অবগত যে মাঠে দলের কাজ করার চেয়ে, সংগ্রাম করার চেয়ে, ভিপি সাইফুল ইসলামকে ম্যানেজ করতে পারলে নেতা হওয়া কনফার্ম...!

আরো উল্লেখ করা হয়, ভিপি সাইফুল ইসলাম দম্ভ করে প্রায়ই বলে থাকেন যে `বগুড়ার কেউই লন্ডনে তারেকের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি শুধু আমি ছাড়া। আমি তারেকের পাশের চেয়ারে একই কনফারেন্সে বসেছি। তারেক বগুড়ার নেতাকর্মীদের উপর ক্ষিপ্ত। তিনি আমাকে বগুড়ার বিএনপির সকল দায়িত্ব দিয়েছেন। কোন কমিটি হবে, কোন কমিটি থাকবে আর কোন কমিটি থাকবেনা তা আমি তারেকের সঙ্গে কথা বলে করবো!

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিষের বাঁশির এই ফেসবুক স্টেটাসই এখন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কথা। ভিপি সাইফুলের সম্প্রতি স্বপরিবারে লন্ডন সফরের ঘটনায় জেলা বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা ধারণা করেছিলেন, তারেক রহমান বহু অভিযোগে ভিপি সাইফুল ইসলামকে সরিয়ে নতুন কাউকে সভাপতির পদে বসাবেন। কিন্তু তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে ভিপি সাইফুলের ঘনিষ্ঠতাকে ভালোভাবে নিতে পারছে না দলের অন্য অংশ।

এখন নতুন করে বগুড়া জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে লন্ডন থেকে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে গুঞ্জণ চলছে। আর নতুন কমিটির শীর্ষ পদে কে আসছেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল।

এ ব্যাপারে জানতে ভিপি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তবে তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন জানান, সভাপতি লন্ডনে গেছেন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। এর বাইরে তার কি কাজ রয়েছে তা বলা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর হেনা জানান, এমন অনেক ত্যাগী নেতা রয়েছে যারা দল সুষ্ঠুভাবে চালাতে পারে। একাধিক মামলা নিয়ে যারা দলের জন্য সর্বস্ব দিয়েছে তাদের মূল্যায়ন নেই এখানে। আর ভিপি সাইফুল এমন একজন সুবিধাবাদী নেতা। যার নামে বিগত সাত বছরে একটি মামলাও হয়নি। তিনি সব সময় প্রতিপক্ষদের সঙ্গে আঁতাত করে চলেন। এটি যদি বুঝতে পারে দলের হাইকমান্ড তবেই মঙ্গল।

একাধিক নেতাকর্মী জানান, বিগত সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে জেলা কমিটির অনেক নেতার নিস্ক্রিয় ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়েই তারেক রহমান বগুড়া জেলা কমিটি পুনর্গঠনে হাত দিয়েছেন। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে গেল ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃণমূল থেকে জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কমিটি করতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন তারেক রহমান। এ কারণে আগের মতোই বগুড়ার কমিটি নিজ হাতে করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডনে অবস্থানরত ছেলে তারেক রহমানসহ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে সেখানেই অবস্থান করছেন দলীয় প্রধান।

একাধিক সূত্র মতে, লন্ডনে বসেই মা-ছেলে মিলে সারাদেশের মতো বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটিও পুনর্গঠন করছেন-এমন খবর পেয়েই সেখানে ছুটে গেছে জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম। এই নেতা আগেও বেশ কবার লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে এবারের লন্ডন যাত্রার তিনি এখন এখন পর্যন্ত তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।

জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাংগঠনকি সম্পাদক মীর শাহে আলম বলেন, `লন্ডনে বসে কমিটি হচ্ছে এটা ঠিক না। কমিটির অনুমোদন দিয়ে থাকেন দলের মহাসচিব। লন্ডনে বসে কমিটির ব্যাপারে বড়জোড় সিদ্ধান্ত হতে পারে।

তবে ৩৮টি মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে থাকা সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল জানান, সেখানে কমিটি হলে দোষের কি আছে। তবে যারা কমিটি করবেন তারা নিশ্চয় মাঠের মতামতকে মূল্য দিবেন। আর সেটি না করা হলে দলের আরো ক্ষতি করা হবে।

উল্লেখ্য, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া। সারাদেশের মধ্যে এ জেলা থেকেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন বিএনপি প্রর্থীরা। এ কারণে বগুড়া বিএনপি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু নিজ দলের মধ্যে বিভাজন, দলীয় কোন্দল, সভাপতির একনায়কতন্ত্র হাজারো প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বড় এই দলটিকে।

লিমন বাসার/এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।