অভিনব কৌশলে বিক্রি হচ্ছে ট্রেনের টিকিট
অভিনব কায়দায় রাজশাহী রেল স্টেশনে টিকিট কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। আর এই কালোবাজারি কারবারে যুক্ত রয়েছেন শহিদুল নামের এক ব্যক্তি। তিনি দীর্ঘ সাত বছর ধরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমের (সি.এন.এস) রাজশাহী রেল স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ইচ্ছে করলেই যেকোনো সময় টিকিট ছাড় করিয়ে কাউন্টার থেকে নিতে পারেন।
টিকিট ছাড়ের কলকব্জা রয়েছে তার হাতেই। সম্প্রতি পাবনার চাটমোহর রেলস্টেশনে প্রশাসন কর্তৃক চার টিকিট কালোবাজারিকে আটক করলে বেরিয়ে আসে রাজশাহী রেল স্টেশনের (সি.এন.এস) কম্পিউটার অপারেটর শহিদুলসহ কয়েক জনের নাম। কতগুলো টিকিট ছাড় হলো আর কতোগুলো থাকলো, তা কেবল সিএনএস এর শহিদুলই জানেন। তবে ঊর্ধ্বতন রেলের যেকোনো কর্মকর্তা তা যাচাই করার অধিকার রাখেন। কিন্তু তারা তা করেন না।
কারণ, এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কিছু রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জড়িত আছেন। ক্ষমতাধর সিএনএস এর শহিদুল কয়েকজন রেলকর্মীদের যোগসাজশে প্রতিদিন তার ইচ্ছেমত টিকিট ছাড় করিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে থাকেন। কেবল রাজশাহীতেই নয়, তার নেতৃত্বে পরিচালিত কালোবাজারির সিন্ডিকেট রেলের পাকশী বিভাগের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতেও রয়েছে।
বিশেষ করে চাটমহর, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ, ঈশ্বরদী, সান্তাহার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে রুটে বিস্মৃত তার টিকিট কালোবাজারির নেটওয়ার্ক। কেবল ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী আন্ত:নগর ট্রেনই নয়, রাজশাহী থেকে চলাচলকারী সকল রুটের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটই কালোবাজারিদের মাধ্যমে পাচার করা হয়। যে কারণে টিকিট ছাড়ের প্রথম দিন থেকেই টিকিট কাউন্টারগুলো শূন্য হয়ে পড়ে। অথচ রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর শীততপসহ (এসি) অন্যান্য কোচের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন খালি থাকে। খালি আসনের টিকিটগুলো দেয়া হয় স্টেশনের কয়েকজন অসাধু কর্মচারীর হাতে। যারা নির্দিষ্ট টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে বিভিন্ন স্টেশনে বেশি মূল্যে টিকিটগুলো বিক্রি করে থাকেন।
অসাধু এই চক্রের কারসাজি আড়াল করতে তারা প্রায়ই সংসদ সদস্য কিংবা নেতাদের নাম ভাঙিয়ে চলেন। অসাধু রেলকর্মীদের ভাষ্য, কাউন্টারে টিকিট না থাকার মূল কারণ সংসদ সদস্য বা দলীয় নেতারা টিকিট নিয়ে গেছেন। প্রকৃতপক্ষে, কালোবাজারিদের কব্জায় টিকিট চলে যাওয়ায় প্রতিদিনই যাত্রীদের অসহায়ের মতো স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হাহাকার করতে দেখা যায়।
তারা যে কি পরিমাণ কালোবাজারি করে তার প্রমাণ মেলে, কিছুদিন আগে স্থানীয় কিছু যুবক কর্তৃক সিএনএস এর শহিদুলকে চাপ দিয়ে টিকিট ছাড় করানোর ঘটনার মধ্য দিয়ে। ওই সময় শহিদুলের হাতে ৮শটি টিকিট ছিল যা যাত্রীদের না দিয়ে কালোবাজারিদের কাছে দেয়ার জন্য রাখা ছিল। ওই ঘটনায় টিকিট কালোবাজারির হোতা শহিদুলের সঙ্গে সাবেক স্টেশন সুপার করিমও জড়িত ছিলেন। অথচ ওই ঘটনার কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রেলওয়ে প্রশাসন।
রেল স্টেশনের একটি সূত্র জানায়, সিএনএস কর্মী শহিদুল কালোবাজারির মাধ্যমে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় তিন লাখ টাকা অবৈধভাবে রোজগার করে থাকেন। যার সিংহভাগ চলে যায় রেলওয়ের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পকেটে। আর সাবেক স্টেশন সুপার আব্দুর করিম ছিলেন এসব অবৈধ কারবারের মূল হোতা। তার সময় কাল আড়াই বছরে রাজশাহী রেল স্টেশনে দুর্নীতির গতি সঞ্চারিত হয়। এ সমস্ত অভিযোগে তাকে কয়েক মাস আগে বদলি করা হলেও, পুনরায় এই স্টেশনে সুপার পদে আসীন হতে তদবির চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। অথচ স্বয়ং রেল মন্ত্রীর নির্দেশে তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী রেল স্টেশনে অবস্থানরত কয়েকজন কর্মচারীর এখন পোয়াবারো। অনেকে টিকিট কালোবাজারির টাকায় কিনেছেন নতুন নতুন মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা। আবার কেউবা বানাচ্ছেন বিলাশবহুল বাড়ি।
এ ব্যাপারে সিএনএস কর্মী শহিদুল সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, টিকিট কালোবাজারি রাজশাহী স্টেশনে হয় না। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তিনি অবশ্যই শাস্তির আওতায় আসতেন। এ মহল তদবিরের টিকিট না পেয়ে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
আর রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন সুপার আমজাদ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, সিএনএস কর্মী শহিদুলের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত এমন অভিযোগ তিনি এই স্টেশনে আসার পর শোনেননি। তবে এ বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।
শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/এমএস