রাজনীতিতে নতুন কিছু নেই, এখন দেশে দুর্গোৎসব


প্রকাশিত: ০৩:৫৭ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৫

এ মুহূর্তে দেশের রাজনীতি নিয়ে নতুন করে খুব বেশি বলার নেই, লেখারও নেই। তবে একেবারে রাজনীতিতে কিছুই বলার নেই-এমনটি নয় মোটেও। আওয়ামী লীগের দলীয় তেমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই। মন্ত্রীদের কেউ কেউ মিডিয়ার সম্মুখে কিছু কথা বলেন, তা নিয়ে মিডিয়ায় পক্ষে বিপক্ষে কিছু কথা হয়। বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং-এর বেশি কিছু করছে না। চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে চোখের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গেছেন বলে প্রেসে বলা হলেও মিডিয়ায় তার লন্ডনে অবস্থান, পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে কৌশল নির্ধারণসহ নানা বিষয়ে নানা খবর প্রচারিত হচ্ছে। তিনি দেশে কবে ফিরে আসবেন তা নিয়ে দল থেকেও সুস্পষ্ট কোনো তারিখ কেউ বলতে পারছেন না।

গুঞ্জনে আছে যে, দেশে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে রায় যাওয়ার আশঙ্কা থেকে তিনি লন্ডনে আপাতত থেকে যাচ্ছেন। আবার আওয়ামী লীগ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, তিনি বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। কোনটি ঠিক- আমরা জানি না। তবে তার লন্ডনে থাকার কারণে নানা ধরনের প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে তৈরি হচ্ছে। বিএনপির কোনো রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে এটি কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর গেছেন। দলের কোনো স্তরের নেতাকর্মীরাই এখন আন্দোলনেও নেই। খুব একটা যোগাযোগও অনেকের সঙ্গে অনেকের নেই-এমনটি বোঝা যাচ্ছে। বিএনপি রমজানের আগ থেকেই বলে আসছে যে, তারা দল পুনর্গঠন করে  তবেই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। কিন্তু দল পুনর্গঠনের কোনো আলামত এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি, কোনো জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নি, কমিটিও গঠিত হয় নি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এখন খুব একটা সক্রিয় নয়। মিডিয়াতেও তাদের উপস্থিতি আগের মতো নেই।

ফলে দল হিসেবে বিএনপির অবস্থান যেহেতু বেশ নাজুক-তাই-রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ানোর মতো দৃশ্যমান শক্তি আপাতত চুপচাপ রয়েছে। তবে জামায়াত ইসলাম বাহ্যিকভাবে নিষ্ক্রিয় মনে হলেও তাদের সংগঠনের নারী এবং ছাত্র কর্মীরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে। আগের মতো মিছিল-সমাবেশ নয়, বরং সামাজিকভাবে তারা সক্রিয়, বাড়ি বাড়ি বা জনে জনে তাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি করা, নতুন নতুন সমর্থক ও সদস্য সংগ্রহ করার কাজ তাদের খুব একটা থেমে নেই। বিশেষত, গ্রামাঞ্চলে মহিলাদের মধ্যে নতুন নতুন কৌশল নিয়ে তারা যাচ্ছে, তাদের সমর্থক বৃদ্ধি করার কাজ একদিনের জন্যেও থেমে নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে জামায়াত প্রচারণা থামিয়ে দেয় নি। মহিলাদের মধ্যে ধর্মীয়ভাবে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের কাজ তারা অবিরত করেই চলছে। এতে তাদের আপাতত লাভের চাইতে ভবিষ্যতে সমর্থক বৃদ্ধিতে লাভ দেবে- এমনটি তাদের রাজনৈতিক হিসাব। অন্য দিকে জঙ্গি সংগঠনগুলোও বেশ তৎপর। তারাও এখানে সেখানে একের পর এক চেষ্টা করে চলছে সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের নাশকতা সংঘটিত করার, দেশকে অস্থিতিশীল করার। তবে র‌্যাবের তৎপরতার কারণে তারা খুব একটা সফল হতে পারছে না। তবে দু’জন বিদেশিকে হত্যার রহস্যটি এখনও পরিষ্কার হয় নি।

প্রকৃত খুনিদের ধরা সম্ভব হলে আসল রহস্য উদ্ঘাটিত হবে-এতে সন্দেহ নেই। তবে ইতালীয় এবং জাপানি নাগরিক হত্যা করার পেছনে যদি বিদেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ফেলার উদ্দেশ্য থেকে থাকে- তাহলে সেটি বোধ হয় পরিকল্পনাকারীদের পুরোপুরি সফল  হয় নি। তবে হত্যাকাণ্ড দু’টি সংঘটিত হওয়ার পর বাংলাদেশে আইএসআই আছে- এমন ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে ওয়েব সাইটে প্রচার করাটি শেষ পর্যন্ত উন্মোচিত হয়েছে যে, এটি বাংলাদেশ থেকেই করা কোনো একটি গোষ্ঠীর কাজ। এতে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশে এমন বেশ কিছু গোষ্ঠী গোপনে সক্রিয় রয়েছে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য নানা ধরনের ছলচাতুরি, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এ ধরনের গোষ্ঠীসমূহ দেশের জন্যে বড় ধরনের বিপদ না হলেও তাদের অপকর্মের সুবিধা নেওয়ার জন্যে দেশ-বিদেশে অনেক শক্তিই ওঁৎ পেতে রয়েছে। বাংলাদেশ আসলেই নানা অপশক্তি, দুর্বৃত্ত এবং জঙ্গিবাদী ভাবাদর্শের বিপদে রয়েছে- এটি প্রায় স্পষ্ট।

অন্যদিকে এসব অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতি দেশের অভ্যন্তরে বিকশিত হচ্ছে না- এটিও স্বীকার করতে হবে। আওয়ামী লীগ তৃণমূল থেকে উপর পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের এ ধরনের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করার কর্মযজ্ঞ নিয়ে কাজ করছে না। কোথাও দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নেই, আলোচনা পর্যালোচনাও নেই। অধিকন্তু দলের মাঝ থেকে নিচ পর্যন্ত সর্বত্র দলাদলি ও গ্রুপিং চলছে। নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে গ্রুপিং করে বেড়াচ্ছেন। জনগণের সঙ্গে কোনো পর্যায়ের নেতাদের কোনো যোগাযোগও নেই, দেশের সম্মুখে এসব অপশক্তির তৎপরতা সম্পর্কে কোনো প্রচারণা নেই। খালি মাঠে জামায়াত-প্রতিক্রিয়াশীলরা গোপনে গোপনে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, তাদের মতো করে সরকার বিরোধী টনিককে জাগিয়ে তোলা হচ্ছে। অন্যান্য দলগুলোও মাঠে নেই, ঢাকা শহরে মাঝেমধ্যে তাদের কিছু কথা শোনা গেলেও জনগণের মধ্যে তাদের কোনো প্রভাব নেই।

ফলে রাজনীতি নিয়ে খুব বেশি নতুন কিছু বলার নেই, লেখারও নেই। এটি চলছে এক ধরনের উত্তাপহীনতার মধ্য দিয়ে। সেদিক থেকে ভালো যে কোনো উত্তেজনা নেই, আন্দোলনের নামে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি নেই। তবে সুস্থ্য ধারার প্রচার- প্রচারণানা থাকায় খালি মাঠটি যারা ধীরে ধীরে নিয়ে নিচ্ছে- তারা ভবিষ্যতে ভয়ানক রাজনীতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে সেই সতর্কতা কত জনের মধ্যে আছে জানি না।

অন্যদিকে এ মুহূর্তে দেশের হিন্দু সম্প্রদায় তাদের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব এরিমধ্যে শুরু করেছে। দেশে এ বছর ২৯ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছে। বেশির ভাগ পূজামণ্ডপই শহরাঞ্চলে হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মণ্ডপের সংখ্যা ক্রমেই সীমিত হয়ে আসছে। এক সময় গ্রামেই দুর্গোৎসব বেশি পালিত হতো। এখন শহরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্তের অবস্থান, নিরাপত্তার বাস্তবতা ইত্যাদি কারণে পূজার আয়োজন ক্রমেই বাড়ছে। এতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অনেকেই ঘুরতে যান, সংহতি প্রকাশ করতে যান। ফলে শহরের পূজামণ্ডপ গুলো মিলন মেলায় পরিণত হচ্ছে। এটি সর্বজনীন উৎসব হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। আসলে এতো বড় উৎসবের একটা অংশ কেবল ধর্ম পূজারিদের, বাকিটা কিন্তু সকলের। যেখানে খাওয়া-দাওয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করা, আড্ডা দেওয়া, দেখা সাক্ষাৎ করা ইত্যাদি বড় একটি পর্ব বলেই বিবেচিত । প্রায় সপ্তাহব্যাপী এতো বড় উৎসবকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায় এখন কেনাকাটা, সাজ সাজ অবস্থা ইত্যাদিতে ব্যস্ত। মণ্ডপও ভরে উঠছে পূজারি এবং দর্শনার্থীদের আনাগোনাতে। এই আনন্দ, আশীর্বাদ, কামনা ও প্রত্যাশা- শুধু নিজের একের জন্যে নয়, সমাজের জন্যেও। সেই শুরু হওয়া অন্য ধর্মাবলম্বীরাও রয়েছেন। ফলে শুরু হওয়া শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে এখন সকলেই আনন্দ উৎসব মেতে থাকবেন-এটিই প্রত্যাশা।

patoary

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।