সনদ থাকলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি আরজাদ আলী


প্রকাশিত: ০৩:২৮ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম তালিকাভুক্ত হয়নি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গেজেটে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়ে আসছেন। কিন্তু জীবনের শেষ মুহূর্তে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজের নামটুকু মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় দেখে যেতে চান তিনি।

বলছিলাম নওগাঁর সাপাহার উপজেলার শিরন্টি (নিমডাঙ্গা) গ্রামের মৃত মগবুল হোসেন ও মৃত মমেদা বিবির ছেলে আরজাদ আলীর কথা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. বশির উদ্দীনের স্বাক্ষরিত একটি পরিচয়পত্র (ক্রমিক নং-৩৮৬৩) নিয়ে দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধ করেন তিনি। আর সহযোদ্ধা ছিলেন আবু হানিফ, গোলাম রসুল ও ফজলুর রহমান। ভারতের দৌড়গঞ্জে যুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবিরে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

আরজাদ আলী জানান, ভারতের দৌড়গঞ্জে প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন ইপিআর হাবিলদার মাহমুদুল্লাহ ও রেজাউল করিম ওরফে টিক্কা খাঁ। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে তাকেও সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য বগুড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বাঙালি ইপিআর সদস্যদের রাজশাহী ক্যান্টেনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা অর্জনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে আত্মনিয়োগ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭২ সালের ২৮ এপ্রিল সহযোদ্ধা গোলাম রসুল, ফজলুর রহমান, তৈবুর রহমান, ইসমাইল হোসেন ওরফে বশিরসহ প্রায় ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে তাঁকেও সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র দেয়া হয়।

তিনি আরো জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েক বার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই ও নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সে সময় একই সনদধারী সহযোদ্ধাদের নাম গেজেট তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হলেও প্রয়োজনীয় তদবিরের অভাবে ও অজ্ঞাত কারণে তার নাম তালিকাবদ্ধ করা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত না থাকায় তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অত্যন্ত অসহায়ভাবে জীবন-যাপন করছেন বলেও জানান।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব ওমর আলী মোল্ল­া জাগো নিউজকে জানান, আরজাদ আলীর নামে প্রদত্ত সনদপত্রটি সঠিক কিন্তু তারপরেও কেন তার নাম গেজেট তালিকায় উঠেনি তা কেবল আগের কমান্ডারগণ বলতে পারবেন। জীবন যুদ্ধে পরাজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আরজাদ আলীর নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন অর রশিদ জাগো নিউজকে জানান, যেহেতু এটি উপজেলার বিষয় তাই আমার সঠিক জানা নেই। তবে সাপাহার উপজেলা থেকে ৭৯ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আব্বাস আলী/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।