হারানো যৌবন ফিরে পাচ্ছে তিতাস
তিতাস শুধু একটি নদী নয়। তিতাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৩০ লাখ মানুষের প্রাণের স্পন্দন। এই তিতাস নদীর জেলেদের সুখ-দুঃখ নিয়ে কালজয়ী ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ লিখেছিলেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাস। ৭০ এর দশকে তিতাস নিয়ে নির্মিত হয়েছিল চলচ্চিত্রও। সেই চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে তিতাসপাড়ের মালুপাড়ার জেলেদের দুঃখ গাথা।
অদ্বৈত মল্লবর্মণ তার তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসে তিতাসের কূল জোড়া জল, বুক ভরা ঢেউ আর প্রাণভরা উচ্ছ্বাস নিয়ে তিতাস নদীর বর্ণনা দিয়েছিলেন। তবে তিতাসের সেই বিশালতা এখন আর নেই। নেই কূল জোড়া জল আর সেই দুরন্ত ঢেউ। নাব্যতা হারিয়ে মেঘনা কন্যাখ্যাত তিতাস ক্রমশ জরাজীর্ণ খালে পরিণত হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র নদীর দুই পাড় দখল করে তৈরি করছে বড় বড় অট্টালিকা। এতে করে স্থবির হয়ে পড়ছে তিতাসের স্বাভাবিক স্রোতধারা।
মালুপাড়ার কয়েকজন জেলে জাগো নিউজকে বলেন, প্রভাবশালীরা তিতাস নদীর দুই পাড় দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলছে। এতে করে দিন দিন মরা খালে পরিণত হয়ে যাচ্ছে তিতাস। এর ফলে নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অনেক কষ্টেই চলছে তাদের জীবন। তবে তিতাসকে তার স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে আনতে নদী খননের পাশাপাশি নদীর দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জেলার নাসিরনগর উপজেলার মেঘনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের পাশ দিয়ে সাতটি উপজেলার উপর দিয়ে বাঞ্ছারামপুরে গিয়ে আবার মেঘনায় মিলিত হয়েছে তিতাস নদী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সঙ্গে নবীনগর উপজেলা সদরের অন্যতম প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে নৌ-পথ। কিন্ত তিতাস নদীর বিভিন্ন অংশে জমে থাকা পলি আর ডুবো চরের কারণে ব্যাহত হচ্ছে নৌ-চলাচল।
এ অবস্থায় তিতাসের হারানো যৌবন পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে তিতাস নদী খননের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নদীর খননের জন্য ১৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে তিতাস নদী খননের খবরে খুশি হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা যেভাবে নদীর দুই পাড় দখল হয়ে যাচ্ছে তাতে হয়তো এক সময় নদীর অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, শিগগিরই তিতাস নদীর খনন কাজ শুরু হবে। নদীর খনন হলে তিতাস তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। পাশাপাশি তিতাস নদী খননের ফলে আঞ্চলিক অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সুগম হবে।
এসএস/এআরএস/এমএস