মহাসচিব হতে আগ্রহ নেই গয়েশ্বরের
বিএনপির মহাসচিব হওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়; দলে এবং দলের বাইরে এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও এই পদ পাওয়ার ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরাম তথা জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাপটের সঙ্গেই রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কে বিএনপির মহাসচিব হলো বা কে হলো না তার সঙ্গে আমার রাজনীতির উত্থান পতনের কোনো সম্পর্ক নেই।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় চলমান রাজনীতি ও সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়েও আলাপ হয় তার সঙ্গে। জাগো নিউজের পাঠকদের উদ্দেশেশ তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
জাগো নিউজ : শোনা যাচ্ছে, দলের মহাসচিব হওয়ার বিষয়ে আপনি নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : মহাসচিব হওয়ার জন্য আমার চেষ্টাও নাই, পাওয়ার কোনো ইচ্ছাও নাই। এটা অনেক বড় একটা দায়িত্ব। যেনতেন বিষয় নয়। আমার কাছে এটা কোনো বিলাসিতা নয়। এটা গুরুদায়িত্ব। এখন অনেক ভালো আছি। দায়িত্ব নিয়ে ব্যর্থ হলে তখন সবার কাছে দােষী হতে হবে। কে দলের মহাসচিব আর কে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেটা আমার জানতেও হয় না, বুঝতেও হয় না। আমি আমার পদে দাপটের সঙ্গেই রয়েছি।
জাগো নিউজ : বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে তৃণমূলকে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল কিন্তু তা যথাসময়ে করা সম্ভব হয়নি...
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : মূল কথা হলো কেন্দ্রের নির্দেশনাটা অর্থবহ ছিল। তবে কে মানলেন বা কে মানলেন না সেটা এখন দেখার বিষয়। চিঠি পাওয়ার পর যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতা দেখেই বোঝা যাবে তারা মানছেন কি মানছেন না। তবে এসব পক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিকতার একটা বিষয় থাকে। তবে আমি মনে করি এতো বড় একটা কাজ শেষ করতে একমাস সময় পর্যাপ্ত নয়। বিএনপি অনেক বড় একটা দল। এই দলের মধ্যে নেতৃত্ব পছন্দ ও অপছন্দের একটা প্রতিযোগিতার পাশাপাশি প্রতিহিংসাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে। কমিটি গঠনের জন্য অবশ্যই সময় বাড়িয়ে দিতে হবে। আর যারা এখনো পুনর্গঠনের কাজ শুরুই করেননি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
জাগো নিউজ : ম্যাডাম দেশে ফিরলে দলে আমূল পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে আপনি কতোটা অবগত?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : আমার মনে হয় কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোভাবের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমরা যারা ঢাকায় রয়েছি তারা একরকম চিন্তা করছি। অন্যদিকে গ্রামে যারা থাকেন তারা আরেকরকম চিন্তা করছেন। তার হয়তো আশা নিয়ে আছেন তারা বিরাট কিছু পাবেন। কিন্তু আমরা এটা ভাবিনা আমরা যে দায়িত্ব নিয়েছে তা কতোটুকু পালন করছি।
তিনি বলেন, দেখুন আমার অফিসে যিনি নিয়মিত আসেন তাকেই সক্রিয় মনে করে যদি ভালো পদে পদায়ন করি তাহলে আমাকে ভাবতে হবে আমার কাছে নিয়মিত আসলে তার এলাকায় হয়তো তিনি সময় দিচ্ছেন না। তাই বলে যারা আসছেন না তাদেরকে তো বঞ্চিত করতে পারবো না। সঙ্গত কারণেই যারা ঢাকায় বসবাস করেন তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দেখা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক তাই বলে এটা ভাবলে চলবে না যে তিনি খুবই সক্রিয়।
তিনি মনে করেন, চাটুকারিতা ও স্বজনপ্রীতি বাদ দিলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। এখন যারা নানা যায়গায় ঘোরাঘোরি করছেন তারাই হয়তো আশায় আছেন ম্যাডাম দেশে ফিরলে কিছু একটা হবে। কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এটা মুর্খের মতো ধারণা। দলের মধ্যে অনেকে হুলিয়া নিয়ে রয়েছেন, স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছেন না। তারা দৃশ্যের আড়ালে। আর দৃশ্যের আড়ালে মানেই মনের আড়ালে। তাই বলে তাদেরকে তো বাদ দিতে পারি না।
জাগো নিউজ : বলা হচ্ছে, যাদের উপর একাধিক মামলার বোঝা তাদেরকে কমিটিতে রাখা হলে তারা হাজিরা দিতে দিতেই সময় চলে যাবে, দলের জন্য বেশি কাজ করার সুযোগ পাবেন না?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : নেলসন ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবরণ করার পর যখন বের হন তখন তার গলায় জনগণ মালা পড়িয়েছে। যারা কারাগারে রয়েছেন তারা শখ করে সেখানে থাকছেন না। বর্তমান পরিস্থিততে সরকারই ভালো বলতে পারবে কারা সঠিক লোক।
জাগো নিউজ : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে সরকার সঠিত হলে সেখানাে আপনাকে মন্ত্রী রাখার কথা শোনা যাচ্ছে?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : সরকার গঠন মানে সরকার পরিবর্তন। ম্যাডাম যেখানে থাকবেন না সেখানে গয়েশ্বর থাকবে, এটাতো চিন্তাও কথা যায় না। যেখানে নির্বাচন নূন্যতম দৃশ্যমান কোনো সম্ভাবনাই নাই। সেখানে আমি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার বিষয়টি নিরর্থক আলোচনা।
জাগো নিউজ : বিএনপির অনেক নেতা দীর্ঘদিনের জন্য বিদেশ চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে গুঞ্জন উঠেছে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : মূল কথা হলো কে-কী কারণে বিদেশ যাচ্ছেন এটা আমার জানা নেই। তবে কারো চিকিৎসা যদি বাংলাদেশে সম্ভব না হয় তাহলে তিনি বিদেশে গিয়ে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিতে পারেন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে বেশি সময় চিকিৎসা নেয়া অপরাধ নয়। আর দলীয় দায়িত্বের যায়গায় ফাঁকি দিয়ে যদি চলে যান তাহলে সেটা হয়তো গ্রহণযোগ্য হবে না। রেসপন্সিবিলিটির যায়গা থেকে সেটা হবে দোষের।
জাগো নিউজ : মধ্যবর্তী নির্বাচনের কেমন সম্ভাবনা দেখছেন?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : আরো সাড়ে তিন বছর সরকারের জন্য অনেক সময়। আমি মনে করি বর্তমান সরকার ২০১৯ সাল পর্যন্ত থাকতে চাইবেই। এটা খুবই স্বাভাবিক। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে যারা সরকারে বসেছেন তাদের মধ্যে তো গণতান্ত্রিক মূলবোধ কাজ করবে না। তারা আবার পার্লামেন্ট দিয়ে ইচ্ছা করলে সরকারের মেয়াদ বাড়াতেও পারে। যেমনটা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালে।
জাগো নিউজ : দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকার কতোটা সফল হবে, বিএনপি কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : এটা মূলত একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার একটা অংশ। দলীয় প্রতীকেই হোক আর প্রতীক ছাড়াই হোক নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয়, আর জনগণ যদি ভোট দিতে না পারে তাহলে কোন পদ্ধতিতে ভােট হলো সেটা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় না। এতে পুলকিত হওয়ার কোনো বিষয় নেই। তবে নির্বাচন নিরপক্ষে হলে মানুষ ধানের শীষেই ভোট দেবে। ভোটারদের কাছে বিএনপির প্রতিনিধিরা না গেলেও ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হবে।
জাগো নিউজ : সম্প্রতি দেশে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিচ্ছেন...
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : খুনিদের খুঁজে বের করা সরকারের দায়িত্ব। বিষয়টি নিয়ে কথা পরিষ্কার। খুনিকে শনাক্তের আগে মন্তব্য করা মানে প্রকৃত খুনিকে আড়াল করা। নিজের পকেটে টাকা রেখে আমি যদি হন্য হয়ে টাকা খুঁজি তাহলে তো টাকা পাবো না। তদন্তের আগে খুনের সঙ্গে অমুকের হাত আছে বলা মানে মূল ঘটনাকে আড়াল করা। বাংলাদেশে গাঁজার চাষ হয় না কিন্তু বাজারে পাওয়া যায়। আর পাওয়া যাওয়ার মানে দেশে গাঁজা খাওয়ার লোক রয়েছে। বিশেষ পদার্থ খেয়ে যদি কেউ উল্টা-পাল্টা কথা বলে তাহলে তো বিষয়টি নিয়ে কিছুই বলার নেই। সরকার যদি খুনিকে চেনে তাহলে কখনোই তারা আটক হবে না। দলীয় লোক বা কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কেউ হলে হয়তো কখনই তাকে আটক করা সম্ভব হবে না।
জাগো নিউজ : দেশে জঙ্গি নেই বলে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বক্তব্য দিচ্ছেন, আপনি কি তাদের বক্তব্যর সঙ্গে একমত?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : গত সাত বছর যাবত সরকার জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ নিয়ে নানা কথা বলেছে। এখন সরকারই বলছে দেশে কোনো জঙ্গি নেই। সুতরাং জঙ্গিবাদের স্লোগান দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছে এটা প্রমাণিত। এখন আবার বিদেশি হত্যার পর বলা হচ্ছে দেশে জঙ্গি নেই। তাহলে আগে কেন জঙ্গি নিয়ে বক্তব্য দেয়া হয়েছিল। জঙ্গিবাদটা তাদের দৃষ্টিতে একটা ফিলোসফিক্যাল টার্ম। জঙ্গিরা বিক্ষিপ্তভাবে কোনো হামলা করে না। তাদের একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে। সেই অর্থে বাংলাদেশে কোনোকালে জঙ্গি ছিল না। একটা বাড়িতে পাঁচটা ধর্মীয় গ্রন্থ পেলে জঙ্গির তকমা দেয়া হয়। এসব বইতো লাইব্রেরিতে কিনতে পাওয়া যায়। মানুষতো কিনেই এসব বই পড়ছে। ধর্মীয় বই পাওয়া আর জঙ্গিবাদ কি এক কথা হলো। এখন আমি যদি এখানে ইসলাম ধর্মের কয়েকটি বই সাজিয়ে রাখি আর আমাকে আটক করার পর বলা হয় জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে তাহলে কী হলো?
জাগো নিউজ : লন্ডন থেকে ম্যাডাম কবে দেশে ফিরবেন?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : তিনি অবশ্যই দেশে ফিরে আসবেন। যতোটুকু জেনেছি একটা চোখের অপারেশন ইতিমধ্যে হয়েছে। আরেকটি হবে। অনেক পত্রিকায় লিখেছে আসবে না। কাজী সিরাজ তার একটি কলামে লিখেছেন বিদেশে থেকেও অনেক কিছু মোকাবেলা করা যায়। তবে ম্যাডাম এই মাসের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বলে অাশা করছি।
জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : আপনাকেও ধন্যবাদ।
এমএম/বিএ