ভারতীয় প্রবাসীর ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্যে চটেছেন আমিরাতের রাজকুমারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৩৫ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতে মুসলিমদের অন্যায়ভাবে আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে বলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) প্রকাশ্যে অভিযোগ এনেছে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও কোনও কোনও ভারতীয় নাগরিকের মুসলিম-বিদ্বেষী মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ভারতকে কূটনৈতিক স্তরে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হয়েছে; পাশাপাশি ভারতে মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকরাও দাবি করছেন মুসলিমদের জন্য ভারতের চেয়ে ভাল দেশ আর হতে পারে না। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সেদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানে ভূষিত করে, পাকিস্তানের প্রতিবাদে তারা কর্ণপাত করেনি।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও ভারতে এসে নরেন্দ্র মোদিকে তার বড় ভাই বলে সম্বোধন করেছিলেন। সার্বিকভাবে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক ও স্ট্র্যাটেজিক ঘনিষ্ঠতা যে ক্রমবর্ধমান, সেটা নতুন কোনও খবর নয়।

তবে চলমান করোনাভাইরাস সঙ্কটের সময় সেই ঘনিষ্ঠতাতেই ফাটলের আভাস দেখা যাচ্ছে। আমিরাতের এক রাজকুমারী হেন্দ আল কাসিমি কয়েকদিন আগে সেদেশে কর্মরত এক ভারতীয় হিন্দুর বেশ কিছু আপত্তিকর ও মুসলিমবিরোধী টুইটের স্ক্রিনশট দিয়ে তাকে হুঁশিয়ারি দেন, যে দেশে রুটিরুজি কামাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ালে সেটা কিন্তু উপেক্ষা করা হবে না!

পরে এ সপ্তাহে এক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি যেভাবে ইসলামকে নিয়ে বিদ্রূপ করেছে এবং ১৪০০ বছরের প্রাচীন এক ধর্মকে গাধাদের ধর্ম বলে গালি দিয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না। হ্যাঁ, আমিরাতকে গড়ে তোলার পেছনে ভারতীয়দের অবদানকে আমরা সম্মান করি, তাদেরকে পরিবারের অংশ বলে মনে করি। ফলে আমি লজ্জিত যে একজন ভারতীয় এমন কথা বলতেও পারেন।

এরপর সৌদি আরবের প্রভাবশালী ইসলামী নেতা শেখ আবিদি জাহারানিও টুইটে বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে কর্মরত যে উগ্রবাদী ভারতীয়রা ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন তাদের অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানো দরকার।

ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসির মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকেও ১৯ এপ্রিল টুইট করা হয়, কোভিড-১৯ ছড়ানোর জন্য ভারতে যেভাবে মুসলিমদের ঢালাওভাবে দায়ী করা হচ্ছে এবং মিডিয়াতে তাদের নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে তা চরম নিন্দনীয়।

ইসলামী বিশ্বের দিক থেকে এই লাগাতার আক্রমণের মুখে ভারতকেও এখন আত্মপক্ষ সমর্থনে নামতে হয়েছে। ভারতে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের প্রধান ঘায়োরুল হাসান রিজভি বিবৃতি দিয়ে বলেন, ইন্দোনেশিয়ার পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলিম থাকেন যে দেশে; সেই ভারতে তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ।

'এখানে তারা নামাজ-রোজা থেকে শুরু করে সব ধর্মীয় আচার নির্বিঘ্নে করতে পারেন, যা সিরিয়া-ইরাক-আফগানিস্তানেও ভাবা যায় না। আমি তো বলব, হিন্দুস্তান মুসলমানদের জন্য এক স্বর্গ।'

ভারতের ক্যাবিনেট মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভিও ঠিক একই সুরে বক্তব্য দেন। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতের রাষ্ট্রদূত পবন কাপুর সেদেশে থাকা ভারতীয়দের মনে করিয়ে দেন, ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা ভারতের নৈতিকতা ও আইনের পরিপন্থী।

সেই সঙ্গে কোভিড-১৯ কোনও জাতি-বর্ণ-ধর্ম দেখে আঘাত হানে না, প্রধানমন্ত্রী মোদির এই বক্তব্যও রিটুইট করেন তিনি। তবে ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক রাহুল সিং মনে করেন, ইসলামী দেশগুলোর ওই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোর আসলে সঙ্গত কারণ আছে।

রাহুল সিং বলেন, যখন এতগুলো মুসলিম দেশ ভারতের মুসলিমদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাতে আমাদের সত্যিই বিচলিত হওয়া দরকার। আর এটা তো শুধু করোনাভাইরাস নিয়েই নয়, এই পরিবেশটা ধীর ধীরে গড়ে উঠেছে; তাদের পিটিয়ে মারা হয়েছে, গোমাংস নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহে রাস্তায় আটকানো হয়েছে। এই ঘটনাগুলো তো আমরা অস্বীকার করতে পারি না।

ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে যে ইসলামোফোবিয়ার ঝড় শুরু হয়েছিল, উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের অনেক বন্ধু দেশও তা ভাল চোখে দেখেনি- এটা পরিষ্কার। এখন ভারতের ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টায় কতটা কাজ হয়; নাকি এর জেরে দুপক্ষের সম্পর্কে কোনও ফাটল ধরে, দেখার বিষয় সেটাই। বিবিসি বাংলা।

এসআইএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।