সাংসদ জেলহাজতে, আইন চলুক নিজস্ব গতিতে


প্রকাশিত: ০৬:৪৩ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৫

গ্রেপ্তারকৃত বিতর্কিত সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে আজ তার নির্বাচনী এলাকা গাইবান্ধায় আদালতে তোলা হলে জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত।

একজন স্কুল ছাত্রকে গুলি করে আহত করার অভিযোগে রাজধানীর উত্তরা থেকে গতকাল বুধবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত শুক্রবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে সুন্দরগঞ্জের গোপালচরণ ব্র্যাকমোড়ে সৌরভ নামে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্র আহত হয় ওই সাংসদের গুলিতে।  সৌরভের অভিভাবকের অভিযোগ, ভোরে ঘুম থেকে উঠে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছিল সৌরভ । এ সময় সংসদ সদস্য লিটন ব্র্যাক মোড়ে গাড়ি থামিয়ে সৌরভকে ডাক দেয়। সৌরভ সাড়া না দিলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে তার দু’পায়ের হাঁটুর নিচে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো সে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনার পর পরই নিন্দার ঝড় ওঠে দেশব্যাপী। দলীয় একজন সাংসদের এহেন কাণ্ডে ক্ষুব্ধ হন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ মিশন থেকে ফিরে সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি স্পষ্ট জবাবে দেন- ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’

যদিও এ ধরনের কথা হরহামেশাই বলা হয়। তারওপর সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্যকে আদৌ আইনের আওতায় আনা হবে কিনা সেটি নিয়ে সংশয় ছিল। পুলিশ ওই সাংসদকে খুঁজেও পাচ্ছিল না। এরপর তিনি নিজেই আগাম জামিনের জন্য আবেদন করেন উচ্চ আদালতে। আদালত শুনানির জন্য দিনও ধার্য করে তাকে নিন্ম আদালতে আত্মসমপর্ণের নির্দেশ দেন। কিন্তু সরকার পক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করে তাকে আত্মসমপর্ণের সুযোগ দেয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জামিন আবেদন শুনানির স্থগিত আদেশ জারির জন্য আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করলে তাকে  গ্রেপ্তারে আর বাধা থাকে না। এরপরও তিনি গ্রেপ্তার হবেন কিনা এ নিয়ে সংশয় ছিল। অবশেষে তাকে  গ্রেপ্তার এবং আদালত কর্তৃক জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের মধ্য দিয়ে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান হল।

কথা হচ্ছে, সাংসদ লিটনকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইন কি তার নিজস্ব গতিতে চলবে? সৌরভের পরিবার কি ন্যায় বিচার পাবে? নাকি সবই লোক দেখানো? জনমনে উঁকি দেওয়া এইসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়াটা  খুবই জরুরি।

একটি দরিদ্র পরিবারের পক্ষে একজন প্রভাবশালী এমপির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া কঠিন কাজ। আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাও তা সমর্থন করে না। কারণ অর্থ-ক্ষমতা অনেক সময় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। এক্ষেত্রে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। এই ধরনের সাংসদরা যে দল, সরকার ও দেশের জন্য মোটেও কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না সেটি তো লেখার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া গণতন্ত্র, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্যও দলমতের উর্ধ্বে ওঠার কোনো বিকল্প নেই।

দেশের মানুষ শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দেখতে চায় যে- আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে এবং আইনের চোখে সবাই সমান।

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।