পুরান ঢাকার ঐতিহ্য রক্ষায় দেবী নিবাসে আলোকায়ন


প্রকাশিত: ০৫:৪৯ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৫

রাজধানীর গর্ব পুরান ঢাকা। সেখানকার মানুষ, কৃষ্টি-কালচার, বাড়িগুলো পর্যন্ত বয়ে চলেছে শত বছরের প্রাচুর্যের ইতিহাস। সময়ের পরিক্রমায় পুরান ঢাকা আজ হুমকির সম্মুখিন।

তার ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদ নিয়ে আঁলিয়স ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা, গ্যেটে ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ এবং আরবান স্টাডি গ্রুপ (ইউএসজি) আয়োজন করতে যাচ্ছে ‘পুরান ঢাকা আলোকায়ন-পাদপ্রদীপে ঐতিহ্য’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান। ফ্রান্স ও জার্মানির দুই আলোক শিল্পী ক্রিস্টফ ব্রুয়াস এবং ফিলিপ গাইস্ট এ লক্ষ্যে ফরাশগঞ্জের দেবী নিবাস আলোকায়িত করবেন।

শুধু আলোকায়ন নয়, এর পাশাপাশি একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজিত হবে যাতে থাকছে নৃত্য ও সংগীত পরিবেশনা। সেই সঙ্গে পুরান ঢাকার সাংস্কৃতিক উপকরণসমূহের একটি প্রদর্শনী হবে।

১৬ অক্টোবর, শুক্রবার সূর্যাস্তের পর ক্রিস্টফ ব্রুয়াস এবং ফিলিপ গাইস্টের অপূর্ব আলোকায়নে ঝলমলে হয়ে উঠবে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য দেবী নিবাস ভবনটি। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের হবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, এমিরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিয়ুক্ত ফরাসী রাষ্ট্রদূত সোফি ওবের এবং বংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিঞ্জ উপস্থিত থাকবেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি শিল্পীদের মধ্যে রাহিন হায়দার স্যাক্সোফোন আর বাঁশি বাজাবেন। শান্তা শাহরিন নৃত্য পরিবেশন করবেন।

দেবী নিবাস
নদীমুখো একটি দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ দেবী নিবাস। সদরঘাটের খুব কাছে। উনিশ শতকের একজন ব্যবসায়ী এবং জমিদার ভবনটি নির্মাণ করান। দুই তলা ভবনটি নদী সংলগ্ন ঢাকার একটি স্মৃতিচিহ্ন। নিওক্লাসিক্যাল ধারায় নির্মিত ভবনটি তাল বৃক্ষে আচ্ছাদিত ছিল। আহসান মঞ্জিলের কাছেই এমন একটি সুরম্য ভবন সাধারণের অগোচরেই ছিল বেশিরভাগ সময়। অনেক অযত্ন এবং অবহেলার পরও ভবনটির সৌকর্য  টিকে আছে।

এক নজরে 

দুই বিদেশি শিল্পীর পরিচয়
ক্রিস্টফ ব্রুয়াস একজন খ্যাতনামা ফরাসি আলোক নির্দেশক এবং থিয়েটার পরিচালক। ফ্রান্সের লিওঁতে ফেটে ডি লুমিয়ের শীর্ষক আলোক উৎসবে অংশ নিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে জার্মান শিল্পী ফিলিপ গাইস্ট চলচ্চিত্র ভিডিও এবং আলোকসজ্জায় খ্যাতিমান। তিনি ছবিও আঁকেন এবং আলোকচিত্রীও।

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে এটি কাজ করছে ১৯৫৯ সাল থেকে। এর মূখ্য উদ্দেশ্য বাংলাদেশের মানুষদের কাছে ফরাসি সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো; বিশেষত ফরাসি ভাষা। এটি স্থানীয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি নির্বাহী কমিটি দিয়ে পরিচালিত হয় যারা ফরাসি সংস্কৃতিতে শ্রদ্ধাশীল।

গ্যেটে ইনস্টিটিউট
ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানির একটি সাংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান দ্য গ্যেটে ইনস্টিটিউট। এটি ভিনদেশে জার্মান ভাষার প্রসার ঘটায় এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটায়। জার্মান সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে তথ্যাদি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি জার্মানি সম্পর্কে ধারণা বিস্তার করে। ঢাকায় ১৯৬১ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠান কর্মরত আছে।

আরবান স্টাডি গ্রুপ
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো নিয়ে কাজ করছে। এর স্লোগান- পুরান ঢাকা বাঁচাও। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে টেকসই নগরায়নের জন্য একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, এই আলোকায়ন ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের আংশিক আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে ফ্রাঙ্কো-জার্মান ফান্ড। ২০০৩ সালে এলিসি চুক্তির চল্লিশ বছর পূর্তিতে এই ফ্রাঙ্কো-জার্মান ফান্ড প্রতিষ্ঠা পায়। ফ্রান্স-জার্মানির মধ্যকার বন্ধুত্বের এটি গুরুত্বপূর্ণ নমুনা। দৃশ্যগত শিল্প, থিয়েটার, সিনেমা, খেলা-ধূলা, বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক, সাহিত্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ ফান্ড বরাদ্দ করা হয়। আরো  উল্লেখ্য এই আয়োজন বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সমর্থনে এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এলএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।