বাড়িতে তৈরি মাস্ক কি করোনা ঠেকাতে পারে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪৮ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০২০

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছেই। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপর্যয় তৈরি করেছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস। এখনও এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন, হোম কোয়ারেন্টাইন, বেশি বেশি হাত ধোঁয়া আর চলাফেরার সময় মাস্ক পরার ক্ষেত্রেই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। এসবের মাধ্যমে করোনার বিস্তাররোধের চেষ্টা চলছে।

এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে সচেতনতাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ছড়ায় বলে বাড়িতে অবস্থানকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুকনো কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে। সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কিনা তা এখনো অজানা।

তবে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে। যেহেতু এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক নেই তাই প্রতিরোধই এখন একমাত্র ভরসা।

প্রতিরোধের মাধ্যমেই এই রোগ থেকে বেঁচে থাকার পথ খুঁজছে মানুষ। ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় মানুষজন ব্যাপকহারে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার শুরু করেছে। মাস্কের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। ফলে মাস্ক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

এ ক্ষেত্রে ব্যাপকহারে বাড়িতে তৈরি ফেস মাস্ক ব্যবহৃত হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, মূলত যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিয়েছে তাদের মেডিক্যাল গ্রেডের ফেস মাস্ক পরা জরুরি। এছাড়া মেডিক্যাল কর্মীদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের মাস্ক ব্যবহার করতে হয়।

কিন্তু যারা এখনও আক্রান্ত হননি তাদের ক্ষেত্রে কি করণীয়? এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু তথ্য বলছে যে, জনসমাগম বিশেষ করে সুপারমার্কেটের মতো স্থানে বাড়িতে তৈরি ফেস মাস্ক পরার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। একেবারে মুখ কোনো কাপড় দিয়ে না ঢেকে রাখার চেয়ে এ ধরনের মাস্ক পরলে অনেকটাই নিরাপদ থাকা যায়।

গত সপ্তাহে এ বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন এক মার্কিন চিকিৎসা কর্মকর্তা। ড. আলবার্ট রিজো নামের ওই কর্মকর্তা বলছেন, আশেপাশে কেউ হাঁচি-কাশি দিলে এ ধরনের মাস্ক প্রতিরোধ তৈরি করতে পারে।

jagonews24

এর আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস বাতাসে এক থেকে তিন ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে মুখ ঢেকে রাখলে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচা যায়।

আমেরিকান লাং এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযাযী, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত চারজনের মধ্যে একজনের করোনার উপসর্গ তেমনটা লক্ষণীয় নয়। আবার অনেকের মধ্যে কোনো ধরনে উপসর্গ দেখাও যায় না। এক্ষেত্রে না জেনেই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সে কারণে বাড়ির বাইরে বের হলে অবশ্যই মুখ ঢেকে রাখার জন্য বার বার লোকজনকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনসন (সিডিসি) । অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হয়ে হোম কোয়ারেন্টাইন, সামাাজিক দূরত্ব এবং বার বার হাত পরিস্কারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এমন পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল অথবা সার্জিক্যাল গ্রেডের মাস্ক না খুঁজে কাপড়ের তৈরি মাস্ক দিয়েই মুখ ঢাকা উচিত। এগুলো একাধিকবার পরিস্কার করে পুণরায় ব্যবহার করা যায়। অপরদিকে, চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল কর্মীদের ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বা সার্জিক্যাল মাস্ক বেশি জরুরি। কারণ তারা করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সরাসরি সান্নিধ্যে থাকেন।

এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যেহেতু ভাইরাস নাক ও মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে তাই নাক-মুখ ঢেকে রাখাটাই সবচেয়ে জরুরি। তাই বাড়িতে তৈরি মাস্ক দিয়েও নিজেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব। সেক্ষেত্রে জনবহুল এলাকায় নাক বা মুখ থেকে মাস্ক না সরিয়ে সরিয়ে ফেলাই উত্তম। বিশেষ করে কারো সঙ্গে কথা বলার সময় মাস্ক পরেই কথা বলতে হবে।

তাছাড়া মেডিক্যাল মাস্ক গুলো একবার ব্যবহারের জন্য। সেক্ষেত্রে সবাই গণহারে এসব মাস্ক ব্যবহার করলে চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল কর্মীরা মাস্ক সঙ্কটে পড়বেন। যারা আক্রান্ত নন তাদের জন্য বাড়িতে তৈরি মাস্ক বা যে কোনো কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখাটাও অনেকটাই নিরাপদ।

যদিও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এই মাস্কের কার্যকারিতা এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। কারণ সার্জিক্যাল বা মেডিক্যাল মাস্ক যেভাবে তৈরি করা হয় এগুলো সেভাবে তৈরি করা হয় না। তবে কোনো কিছু দিয়ে মুখ না ঢেকে বের হওয়ার চেয়ে বাড়িতে তৈরি মাস্কগুলো আপনাকে অনেকটাই নিরাপদ রাখতে সক্ষম।

টিটিএন/এমকেএইচ

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।