করোনার প্রভাব : ভারতের ১২৫ মাইল দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে হিমালয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৫ এএম, ০৯ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বই আজ স্তব্ধ, ঘরে বন্দি মানুষ। তবুও প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। আক্রান্ত বাড়ছে প্রতি মিনিটে। এরই মধ্যে আক্রান্ত পার হয়েছে সাড়ে ১৪ লাখ। মৃত্যুবরণ করেছে ৮৭ হাজারের বেশি মানুষ।

ছোঁয়াছে এই ভাইরাসের প্রকৃতিই এমন যে, কে করোনায় আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নয়, সেটাই বোঝার উপায় নেই। একজন ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার পর তার লক্ষ্মণ প্রকাশ হতে হতেই আরও কতজন তার মাধ্যমে আক্রান্ত হচ্ছে তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।

এ কারণেই দেশে দেশে এখন চলছে লকডাউন-কোয়ারেন্টাইন। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই করোনা যেন আশির্বাদ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে এই বিশ্বের জন্য। এর মধ্যে একটা হলো পরিবেশ ও প্রকৃতি।

করোনাভাইরাসের কারণে চলা লকডাউনে মানুষ ঘরবন্দী হওয়ায় কমে গেছে পরিবেশ দূষণ। নদী-সমূদ্রের পানি হয়েছে নির্মল-নীল, গাছ-গাছালি যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বাতাস হয়ে উঠেছে নির্মল-প্রাণজুড়ানো।

পরিবেশের দূষণ কমে যাওয়ার ফলে আশ্চর্যজনক ঘটনাও ঘটেছে। ভারতে বসেই দেশটির অধিবাসীরা খালি চোখে দেখতে পাচ্ছেন হিমালয়ের চূড়া। ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের জালান্দর জেলার বাসিন্দারা ১২৫ মাইল দূর থেকেও খালি চোখে দেখতে পাচ্ছেন বরাফাচ্ছাদিত হিমালয় পর্বত।

হিমালয়ের সেই ছবি ক্যামেরায় ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও পোস্ট করছেন জালান্দরের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ৩০ বছর পর এভাবে তারা সরাসরি হিমালয় দেখতে পেলেন।

Himalaya

মানুষের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণে পর্যায়ক্রমে পরিবেশ দূষণও বেড়ে গেছে। বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে দূর থেকে আর হিমালয় পর্বত দেখা যায়নি। কিন্তু করোনার প্রভাবে পরিবেশ দূষণ কমে যাওয়ায়, বাতাসে ভারি পদার্থের ঘনত্বও কমে গেছে। যার ফলে খালি চোখেও অনেক দুর দেখা সম্ভব হচ্ছে।

ভারত এমনিতেই বায়ু দূষণপ্রবন একটি দেশ। এখানকার ১৪০ কোটি মানুষ মারাত্মক দূষণের শিকার। ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্টের সূচকে গত বছরও সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে ভারতের নাম ছিল উপরের দিকে। দিল্লিসহ উত্তর ভারতে বায়ু দূষণের কারণে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছিল গত কয়েক বছর ধরে। করোনার কারণে ২১ দিনের লকডাউনে পুরো ভারত। এই সুযোগই দূষণ সরে যাওয়ায় সেই পরিবেশ বিপর্যয় থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা মিলেছে ভারতবাসীর।

ভারতীয় ক্রিকেটার হরভজন সিংয়ের বাড়ি জালান্দরে। কয়েকদিন আগেই তিনি স্থানীয় ৫ হাজার অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্য-সামগ্রী বিতরণ করেছিলেন। হরভজন নিজের বাড়ির ছাদ থেকে হিমালয়ের ছবি তুলে টুইটারে পোস্ট করেন। তিনি লিখেন, ‘কখনোই এভাবে আমার বাড়ির ছাদ থেকে খালি চোখে ধাওলাদার রেঞ্জ দেখিনি। এটা ছিল যেন আমার জন্য একটি অকল্পনীয় বিষয়। এতেই বোঝা যাচ্ছে, আমাদের এই পৃথিবীকে আমরা কতটা দূষিত করে তুলেছি। আর দুষণ কমে যাওয়ায় এখন কি হয়েছে। এটাই হচ্ছে সেই চিত্র।

টিজে সিং নামে একজন লিখেছেন, ‘জালান্দর থেকেই এখন হিমালয় পর্বত দেখা যাচ্ছে। পাঞ্জাবে পরিবেশের দূষণ কমে যাওয়ার ফলেই এটা সম্ভব হচ্ছে। খুবই সুন্দর একটি দৃশ্য।’ আব্বু পন্ডিত নামে একজন কিছু ছবি দিয়ে ক্যাপশন লিখেছেন, ‘আমার বাড়ি থেকে দেখা কিছু পর্বতের ছবি।’

পাঞ্জাবের সান্ত বালবির সিং সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের বাড়ির ছাদ থেকে কিংবা উঠান থেকেও আমরা বরফে ঢাকা হিমালয় পাহাড়ের চূড়া দেখতে পাচ্ছি। শুধু তাই নয়, রাতের বেলা তারাও দেখা যাচ্ছে খালি চোখে। সাম্প্রতিক সময়ে কিংবা দীর্ঘদিন আমি এ ধরনের কিছু দেখিনি।’

এর কারণে হিসেবে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র রাস্তায় গাড়ি বন্ধ এ কারণেই নয়, এ সময় অনেক কল-কারাখানাও বন্ধ। এগুলোই বাতাসে দূষণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করেছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সঠিক পরিমাণে নির্মল বায়ু এবং সেখানে অক্সিজেনের উপস্থিতি যদি নির্দিষ্ট মিটারে ২০ মিলি গ্রামের বেশি হয়, তাহলে সেটা হবে আদর্শ। কিন্তু ভারতের বাতাসে দূষণ এতটাই মারাত্মক যে, সেখানে বাতাসে অক্সিজেনের মান হচ্ছে মাইনাস ১০০ মিলি গ্রাম।

himalaya

ভারতের সেন্ট্রাল পলিউশন বোর্ড বলছে, দেশব্যাপি লকডাউন চলার প্রথম দিন থেকেই বাতাসের মান ভালো হতে শুরু করেছে। ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মার্চের ১৬ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত ভারতের একিউআই ছিল ১১৫। কিন্তু ২৪ মার্চ লকডাউন শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই দেশটির এয়ার কোয়ালিটি তথা একিউআই উন্নতির দিতে যাত্রা শুরু করে। লকডাউনের প্রথম তিনদিনেই এয়ার কোয়ালিটি অনুভব হতে শুরু করে ৭৫ করে।

বাতাসে সবচেয়ে আদর্শ একিউআই হচ্ছে ১ থেকে ৫০ পর্যন্ত। এর অর্থ হচ্ছে বাতাসে কোনো রিস্ক নেই। দুষণের মাত্রাও শূন্যের কোঠায়। একিউআই যদি ৫০ থেকে ১০০ হয়, তাহলে তার অর্থ হচ্ছে বাতাসের মান মধ্যম মানের। এর চেয়ে বেশি হলেই সেটা ঝুঁকিপূর্ণ।

লকডাউনের শুরুরদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার দেয়া ভাষণে বলেন, ‘ভারতকে বাঁচাতে, প্রতিটি নাগরিককে বাঁচাতে, আপনি, আপনার পরিবার, প্রতিটি রাস্তা, আপনার প্রতিটি প্রতিবেশি- সবাইকেই লকডাউন করা হলো। সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হলো। শুধুমাত্র মেডিক্যাল ও ঔষধ সম্পর্কিত সব কিছুই খোলা থাকবে।’

আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।