সমস্যা চিহ্নিত করে ঢাবি উপাচার্যের কাছে ছাত্রলীগের স্মারকলিপি


প্রকাশিত: ০৯:৪০ এএম, ১২ অক্টোবর ২০১৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)’র সাধারণ শিক্ষার্থীদের ১৯টি প্রধান সমস্যাকে চিহ্নিত করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এর আগে দুপুর সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সাধারণ শিক্ষার্থী মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে শাখা ছাত্রলীগ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায় ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। ৬৮ বছরের প্রবীণ এ সংগঠনটি অতীতের ন্যায় আজও শিক্ষার্থীদের কিছু মৌলিক সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যা নিয়ে আজ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করছি।

এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি দাবি সমূহ সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। দাবি সমূহের মধ্যে রয়েছে-

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবসিক ছাত্রাবাসগুলোর মানসম্মত খাবার পরিবেশন ও ক্যান্টিনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা এবং খাবারের মান অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগের শ্রেণি কক্ষগুলো যুগোপযোগী করা। যেমন- শিক্ষা সরাঞ্জাম, ডিজিটাল বোর্ড স্থাপন, প্রজেক্টর ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানের লক্ষ্যে ঢাবির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে স্বল্প মূল্যে এবং সহজ কিস্তিতে ‘ল্যাপটপ’ প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। প্রত্যেক ল্যাবরেটরিতে সর্বাধুনিক সরাঞ্জম ও প্রযুক্তি, সরবরাহ ও স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা। ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা এবং সুনির্দিষ্ট অভিযানের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ব্যবস্থা নেয়া। পরিষ্কার-পরিছিন্নতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মোড়ে ডাস্টবিন স্থাপন করা এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা।

আবাসিক হলগুলোতে নিয়মিত মশা ও ছারপোকা নিধন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার যথাযত উন্নয়ন করা। ক্যাম্পাস ও প্রতিটি আবাসিক হলকে ওয়াই-ফাই (ইন্টারনেট) জোনের আওতায় আনা। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিসহ প্রতিটি আবাসিক হলের গ্রন্থাগারকে আধুনিকীকরণ করা ও যুগোপযোগী পাঠ্যবই, মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত বইয়ের সংগ্রহ বৃদ্ধি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠগুলোকে নিয়মিত পরিচর্যা করা ও খেলার মাঠগুলোকে ভাড়া প্রদান বন্ধ নিশ্চিত করা এবং বিভিন্ন সময় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা। ক্যাম্পাসকে নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এর যথাযথ ব্যবস্থা ও ভূমিকা গ্রহণ করা এবং আবসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সিসি টিভি সংযুক্ত করা।

ইভটিজিং প্রতিরোধে ‘যৌন নিপিড়ন বিরোধী সেল’ এর ভূমিকা ত্বরান্বিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং মেয়েদের হলগুলোতে যাতায়াতের পর্যাপ্ত পরিবহনের ব্যবস্থা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসার সারঞ্জামাদি সরবরাহ ও ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উক্ত গবেষণায় অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান করা।

গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে সকল ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে নিরাপত্তা জনিত কারণে ভাড়ায় চালিত বাস ও ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা ও ক্যাম্পাসের ভেতর অবৈধ স্থাপনা যেমন কার্জন হলের আশেপাশের নার্সারি, বিভিন্ন ধরনের দোকান উচ্ছেদ করা। পুরাতন প্রত্যেক আবাসিক হলগুলো অতি দ্রুত সংস্কার করে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিপদমুক্ত করে বসবাসের উপযোগী করে তোলা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল ও বিভিন্ন  স্থানের দূরত্ব অনুযায়ী যথাযথ রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া।

দাবিগুলো বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কয়েকটি সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো- উক্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগ ও আবাসিক হলের শিক্ষক ও হল প্রাধ্যক্ষদের মাধ্যমে বিভিন্ন কমিটি ও উপকমিটি গঠন করা এবং উক্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোকে কমিটিতে যুক্ত করা।

সংবাদ সম্মেলনে উক্ত দাবি সমূহ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সকল ধরণের সহযোগীতা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বদ্ধ পরিকর বলেও ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এ নেতা।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ।

এমএইচ/আরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।