জার্মানি আর ইতালির মৃত্যুহারে এত ফারাক কিভাবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৫০ এএম, ২৩ মার্চ ২০২০

চীনের পর এখন ইউরোপকে আষ্টেপিষ্টে ধরেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের শিকার হয়েছে ইতালি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৪৭৬ জন মারা গেছেন এই ভাইরাসে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৬৫১ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯ হাজার ১৩৮ জন।

ইতালিরই পার্শ্ববর্তী দেশ জার্মানি। অথচ জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির দেয়া তথ্য বলছে, রোববার সকাল পর্যন্ত জার্মানে মৃতের সংখ্যা মাত্র ৮৪ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ৩৬৪ জন।

এর মানে হলো করোনা এ পর্যন্ত যে দশটি দেশে বেশি আঘাত হেনেছে তার মধ্যে জার্মানিতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম, মাত্র ০.৩ শতাংশ। যেখানে কি-না ইতালিতে এর হার ৯ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ৪.৬ শতাংশ।

দুই দেশের মৃত্যুহারের এই বিরাট ব্যবধান দেখে বিস্মিত বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য বিস্মিত হওয়ার কারণও রয়েছে। কেননা ইউরোপের এই দেশ দুটিতে ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়স্ক লোকের বসবাস রয়েছে।

তাহলে এত ব্যবধানের কারণ কী-এ প্রশ্নে নীরব জার্মানের রাজনীতিবিদ ও জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মীরা। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বরার্ট কোচ ইনস্টিটিউটের (আরকেআই) লোথার ওয়েলার মনে করেন, অদূর ভবিষ্যতে ইতালি ও জার্মানির মধ্যে এই তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য থাকবে না।

হামবার্গ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের ইকফেকশোলজি বিভাগের প্রধান ম্যারিলিন অ্যাডো বলেছেন, ‘আসলেই জার্মানি অন্যান্য দেশের তুলনায় এই মহামারি মোকাবিলায় চিকিৎসার দিক দিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি প্রস্তুতি নিয়েছে কি-না, তা বলার সময় এখনো হয়নি।’

অবশ্য তার মতে, ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় শহরের হাসপাতালগুলো যেমন রোগীতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ, জার্মানিতে এখনও সেই অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। আমরা এখনো হাসপাতালের বেড পরিষ্কার করার যথেষ্ট সময় পাচ্ছি, চিকিৎসা-সামগ্রী মজুত করা হচ্ছে এবং ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জমাদি বিতরণ করছি।

তবে জার্মানি একদিক দিয়ে একটা সুবিধা পেয়েছে, তা হলো-প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আমরা প্রফেশনাল কনটাক্ট ট্র্যাসিং শুরু করে দিয়েছি। আসন্ন ঝড় আসার আগেই আমরা ক্লিনিকগুলো প্রস্তুতি করার সময় পেয়েছি’-বলেন জার্মানির এই বিশেষজ্ঞ।

দ্বিতীয় বিষয় হলো-স্বাস্থ্য পরীক্ষা। প্রথম করোনা কেস ধরা পড়ার পর ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা অভিযান চালায় জার্মানি। এমনকি করোনার ছোটখাট লক্ষণ প্রকাশ পেলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এর ফল পেয়েছে দেশটি।

জার্মানির ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্ট্যাটিউটরি হেলথ ইনস্যুরেন্স ফিসিশিয়ান্সের তথ্য বলছে, জার্মানিতে যে পরিমাণ টেস্ট কিট রয়েছে তা দিয়ে দিন কমপক্ষে ১২ হাজার জনের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা সম্ভব। তবে আরকেআইয়ের বিশেষজ্ঞ ওয়েলারের তথ্য মতে, সপ্তাহে এক লাখ ৬০ হাজার টেস্ট করার সক্ষমতা রয়েছে জার্মানির।

দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়া তাদের নাগরিকদের যেভাবে কোভিড-১৯ টেস্ট করিয়েছে, সেই হারে জার্মানি করেনি। তবে আক্রান্ত রোগী ও সম্প্রতি ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ আক্রান্ত (যেমন ইতালির লম্বার্ডি বা চীনের উহান)’ এলাকা থেকে ফেরা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

বার্লিনের চ্যারিটে হাসপাতালের ভাইরোলজিস্ট ক্রিশ্চিয়ান ড্রস্টেন। ডাই জেইট পত্রিকা তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ইতালিতে যেসব তরুণ ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন তাদের কাউকেই শনাক্ত করা হচ্ছে না। এটাও সেখানকার মৃত্যুহারের অন্যতম কারণ।’

সূত্র : দ্য ইনডিপেনডেন্ট

এসআর/পিআর

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।