সাদ্দাম থেকে কাসাব-ফাঁসিতে ঝোলার আগে কী খেতে চেয়েছিলেন তারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২৯ পিএম, ২২ মার্চ ২০২০

‘লাস্ট মিল’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। বিশেষ করে আদালত ও কারাগার সংশ্লিষ্টরা এই শব্দের সঙ্গে পরিচিত। এর অর্থ হলো মৃত্যুর আগে শেষ খাবার। দণ্ডিতদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে তাদের শেষ ইচ্ছা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তেমনই শেষবারের মতো তারা কী খেতে চান-তাও জানার একটা রীতি রয়েছে। এরই নাম ‘লাস্ট মিল’।

সম্প্রতি ভারতে নির্ভয়া-হত্যাকাণ্ডের চার আসামির ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তাদের কাছেও জানতে চাওয়া হয় তাদের শেষ ইচ্ছা কী এবং কী খেতে চান।

শুধু নির্ভয়া-হত্যাকাণ্ড নয়; চলুন, জেনে নেয়া যাক সারা বিশ্বে আলোচিত কিছু দণ্ডিতের নানা ধরনের লাস্ট মিল আবদার সম্পর্কে। কতগুলো উল্লেখযোগ্য লাস্ট মিলের তালিকা তুলে ধরা হলো-

jagonews24

ভিক্টর হ্যারি ফেগুয়ের : মাত্র ২৮ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬৩ সালে ফাঁসি হয় তার। তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ছিল। মৃত্যুদণ্ডের ঠিক আগে তাকে যখন লাস্ট মিলের কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, উত্তরে ভিক্টর একটা অলিভ খেতে চেয়েছিল। কারা কর্তৃপক্ষ তার এ ইচ্ছা পূরণ করেছিল।

jagonews24

টিমোথি ম্যাকভে : যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা শহরে বিস্ফোরণের ঘটনায় দণ্ডিত হন ম্যাকভে। ওই বিস্ফোরণে ১৬৮ জন প্রাণ হারান এবং ৬৮০ জন আহত হন। ৯/১১ হামলার আগে পর্যন্ত এটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক সন্ত্রাসবাদী হামলা। বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। লাস্ট মিলে দুটি মিন্ট চকলেট চিপ আইসক্রিম খেতে চেয়েছিলেন তিনি।

jagonews24

অ্যাঞ্জেল নিভেস দিয়াজ : খুন, অপহরণ এবং ডাকাতির জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল তাকে। ফ্লোরিডার আদালত বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে ৫৫ বছরের এই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। তবে লাস্ট মিল খেতে চাননি অ্যাঞ্জেল। তাকে কারাগারের সাধারণ খাবার দেয়া হয়। তা-ও তিনি খাননি।

jagonews24

স্টিভেন মাইকেল উডস জুনিয়র : টেক্সাসে ২০১১ সালে বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। জোড়া খুনের অপরাধী ছিলেন তিনি। তার লাস্ট মিলের তালিকা ছিল লম্বা। দুই পাউন্ডের বেকন, বিশালাকার মাংসের পিৎজা, চারটি ফ্রায়েড চিকেন ব্রেস্ট, মাউন্টেন ডিউ, পেপসিস রুট বিয়ার আর মিষ্টি চা দুটি করে, দুটি আইসক্রিম, পাঁচটা চিকেন ফ্রায়েড স্টিকস, দুটি হামবার্গার উইথ বেকন, ফ্রাইস এবং এক ডজন গার্লিক ব্রেড স্ট্রিকস। তিনি কি সব খাবার খেয়েছিলেন? হ্যাঁ, সব খাবার সাবাড় করেছিলেন।

jagonews24

জন ওয়েন গেসি : মার্কিন সিরিয়াল কিলার জন অন্তত ৩৩ জনকে খুন করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে ৫২ বছরের জনকে বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। লাস্ট মিলে তিনি ১২টা চিংড়ি মাছ ভাজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস, এক পাউন্ড স্ট্রবেরি এবং কেএফসির একটা বাকেট খেতে চান।

jagonews24

রবার্ট অ্যালটন হ্যারিস : ১৯৬৭ সালের পর থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রথম মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত রবার্ট। ১৯৯২ সালে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সান দিয়োগোর দুই বালককে খুন করেছিলেন তিনি। লাস্ট মিলে ২১ টুকরো কেএফসি ফ্রায়েড চিকেন, দুটি বড় ডমিনোজ পিৎজা, আইসক্রিম, এক ব্যাগ জেলি বিনস, ছয়টি পেপসির ক্যান এবং এক প্যাকেট সিগারেট খেয়েছিলেন হ্যারিস।

সাদ্দাম হোসেন : জীবনের শেষ ছয় মাস বাগদাদের কারাগারে কেটেছিল ইরাকের সাবেক এই প্রেসিডেন্টের। সাদ্দামের ওপরে নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫১তম মিলিটারি পুলিশ কোম্পানির জনা ১২ সদস্য। ২০০৬ সালে ফাঁসি হয় তার। সাদ্দাম শেষ বারের মতো খেতে চেয়েছিলেন-মাংস, ভাত এবং এক কাপ মধুমিশ্রিত পানি।

jagonews24

আজমল কাসাব : ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলায় দোষী আজমলের ফাঁসি হয় ২০১০ সালে পুনের ইয়ারাদা কারাগারে। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লাস্ট মিলের কোনো আবদার রাখেনি আজমল। জানা যায়, একটা টমেটো এবং কারাগারের সাধারণ খাবার খেয়েছিলেন তিনি।

Ajmol-Guru.jpg

আফজাল গুরু : আফজাল গুরুর ফাঁসি হয় ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। ফাঁসির ঠিক আগে ভোরে আফজাল কুঠুরিতে বসে চা খান। এরপর আফজাল আরও এক কাপ চা খেতে চান, কিন্তু তার সেই অনুরোধ রাখেনি কারা কর্তৃপক্ষ।

jagonews24

নির্ভয়ার চার দণ্ডিত : নির্ভয়ার চার দণ্ডিত পবন, মুকেশ, অক্ষয় এবং বিনয় লাস্ট মিল খেতে চাননি। এমনকি চারজনের কেউই গোসল পর্যন্ত করতে চাননি। বিনয় শর্মার মা তাকে লাস্ট মিলে পুরী, সবজি আর কচুরী বানিয়ে খাওয়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ সেই অনুরোধ রাখেননি।

সূত্র : আনন্দবাজার

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।