ইতালিতে একদিনে আরও ৩৬৮ জনের প্রাণ নিল করোনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২৬ এএম, ১৬ মার্চ ২০২০

অডিও শুনুন

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইউরোপের দেশ ইতালিতে একদিনে আরও ৩৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১ হাজার ৮০৯ জনে।

ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৫৯০ জন। আর সবমিলিয়ে দেশটিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ২৪ হাজার ৭৪৭।

চীনের পর করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পরামর্শ নিতে চীন থেকে একদল বিশেষজ্ঞ গত শুক্রবার ইতালিতে এসে পৌঁছেছেন। ইতোমধ্যে তারা স্পালানজানি হাসপাতাল পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং ইতালিয়ান চিকিৎসকদের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে আলোচনা করছেন।

এদিকে দেশটির প্রায় ছয় কোটি জনগণকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশিও রয়েছেন বলে জানা গেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশটিতে জারি করা জরুরি অবস্থার মধ্যে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। গোটা ইতালি এখন থমকে আছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। কোনো পর্যটক দেশটিতে প্রবেশ করতে পারছেন না। সরকারের কঠোর নির্দেশনা, অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন ঘর থেকে বাইরে বের না হয়।

jagonews24

করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ইতালির বিখ্যাত বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফেরারি আগামী দুই সপ্তাহের জন্য তাদের দুটি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গোটা ইতালি অবরুদ্ধ থাকায় ‘মারাত্মক জটিলতায়’ পড়তে হচ্ছে জানিয়ে শনিবার ঘোষণাটি দেয় ফেরারি কর্তৃপক্ষ।

করোনাভাইরাসের কারণে জনবহুল রোমও জনশূন্য। রোমের ক্লোসিয়াম, ফোনতানা ত্রেভি, ভেনেসিয়াসহ দর্শনীয় স্থানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গোটা ইতালির জনগণ এখন বন্দি জীবনযাপন করছেন। সুপার মার্কেটগুলোতে একসঙ্গে সবাইকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। সবসময় সেখানে দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলছে সরকার ঘোষিত প্রতিষ্ঠানগুলো। কিছু সুপার মার্কেট ও ক্লিনিকে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে, ইতালিজুড়ে মাস্কের খুবই অভাব দেখা দিয়েছে। সরেজমিন ঘুরে কয়েকটি ফার্মেসিতে মাস্ক পাওয়া যায়নি। বিক্রেতারা বলছেন, আগামী সপ্তাহে পাওয়া যেতে পারে।

jagonews24

জরুরি অবস্থায় যানবাহনও আগের মতো চলছে না। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে। ইতালির সরকার করোনার মহামারি সামাল দিতে নতুন নতুন আদেশ জারি করে একের পর এক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছে। সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সর্বত্র প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, সর্বসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ইতালির পর ইউরোপে করোনাভাইরাসে দ্বিতীয় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ স্পেন। দেশটিতে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯১ জনে। রোববার (১৫ মার্চ) পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭৫৩ জন। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৫১৭ জন রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

দেশটিতে করোনার প্রকোপ যেন বাড়তে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে লোকজনের চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এদিকে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে স্পেন সরকার। এই জরুরি অবস্থা ১৫ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। খাবারের দোকান, ওষুধ, কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল বা জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। সবাইকে বাড়িতেই অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৪৫৬ জনের। এ পরিস্থিতিতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এমএসএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।