উহানে করোনা ছড়িয়েছে মার্কিন সেনা, দাবি চীনের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০৯ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২০
মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছেন বলে বেইজিংয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছে ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র দফতর। এই দাবির প্রতিবাদ জানাতে শুক্রবার ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান একদিন আগে টুইট করে হুবেই প্রদেশে মার্কিন সামিরক বাহিনীর সদস্যরা একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করেন। তার এই টুইটের পর রাষ্ট্রদূত চুই তিয়ানকাইয়ের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন এশিয়া অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন শীর্ষ কূটনীতিক ডেভিড স্টিলওয়েল।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারি শুরু এবং বিশ্বকে এ ব্যাপারে অবগত না করার দায়ে যে সমালোচনা শুরু হয়েছে; সেটি আড়াল করতে চাইছে চীন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো বিপজ্জনক এবং হাস্যকর। আমরা চীন সরকারকে জানাতে চাই, চীনের জনগণ এবং বিশ্বের মঙ্গলের জন্য আমরা এটি সহ্য করবো না।
গত বৃহস্পতিবার মান্দারিন এবং ইংরেজি ভাষায় ঝ্যাও ওই ষড়যন্ত্র হাজির করেন এক টুইটে। তার এই টুইট মুহূর্তের মধ্যেই চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারির এই রোগ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিল; চীনের মেট্রোপলিটন শহর উহান থেকে নয়। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
ঝ্যাও বলেন, মার্কিন সামরিক বাহিনীই এই মহামারিকে উহানে নিয়ে এসেছিল। স্বচ্ছতা বজায় রাখুন। আপনাদের তথ্য-উপাত্ত উন্মুক্ত করুন। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাখ্যা জরুরি।
চীনা এই কর্মকর্তা এমন এক সময় যুক্তরাষ্ট্রকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত করলেন; যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন করোনা মোকাবিলায় দেশে সমালোচনার মুখ পড়েছে। তবে ঝ্যাওয়ের ওই টুইটের একদিন আগেই ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত চুই একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রত্যাশা করছে চীন।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার থেকে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটিয়েছে। করোনা মহামারির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাংবাদিকরা চীনের পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তার ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ব্যাপারে জানতে চাইলে তা প্রত্যাখ্যান করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, তারা জানেন, এই ভাইরাস কোথায় থেকে এসেছে। আমরা সবাই জানি, এটি কোথায় থেকে এসেছে। তবে এই বিতর্কের প্রভাব চীন-মার্কিন প্রথম ধাপের বাণিজ্যচুক্তিতে পড়বে না বলে জানান ট্রাম্প।
গত বছরের অক্টোবরে হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে সপ্তম মিলিটারি ওয়ার্ল্ড গেম শুরু হয়। এই গেমে অংশ নিয়েছিলেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর তিন শতাধিক অ্যাথলেট। এ সময় বেশ কয়েকজন অ্যাথলেট ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সেই সময় এটিকে ফ্লু-বাহিত সংক্রমণ বলে জানানো হলেও পরে জানা যায়, মার্কিন এই সামরিক অ্যাথলেটরা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস ৫ হাজার ৪৩৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়ে এখন বিশ্বের শতাধিক বিস্তার ঘটিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের প্রকোপকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪৮ জন।
এই ভাইরাসের বিস্তার ঘিরে বিশ্বজুড়েই নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ঘুরপাক খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম নষ্ট করার জন্য রাশিয়া কৌশলে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফেসবুক এবং টুইটারে সমন্বয় করে এই ভাইরাসের বিস্তারের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত বলে রাশিয়া নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে।
তবে সামাজিকে যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া। ১৯৮০ সালে সোভিয়েত শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র এইচআইভি ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে গুজব রটেছিল।
এদিকে, ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। এই চিঠিতে মানবতার বিরুদ্ধে জীবাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হচ্ছে কিনা; সেটি জানতে তদন্তের আহ্বান জানান ইরানের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। এছাড়া মার্কিনবিরোধী হিসেবে পরিচিত ইরান এবং চীনেই কেন এই ভাইরাস মারাত্মকভাবে সংক্রমণ ঘটিয়েছে; সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
2/2 CDC was caught on the spot. When did patient zero begin in US? How many people are infected? What are the names of the hospitals? It might be US army who brought the epidemic to Wuhan. Be transparent! Make public your data! US owe us an explanation! pic.twitter.com/vYNZRFPWo3
— Lijian Zhao(@zlj517) March 12, 2020
এসআইএস/এমকেএইচ