করোনাভাইরাস : ধূমপায়ীদের জন্য দুঃসংবাদ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩২ পিএম, ০৯ মার্চ ২০২০
আপনি ধূমপায়ী হলে আজই ধূমপান ছেড়ে দিন। অন্যথায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন আপনি। গবেষকরা বলছেন, ধূমপান ফুসফুস রোগের কারণ। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ধূমপান ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এতেই মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ হলো হালকা জ্বর, সর্দি ও কাশি। তবে এটি ফুসফুসকে আক্রমণ করে বসলে ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ফুসফুসের কার্যকারিতা ধরে রাখতে ধূমপান ছেড়ে দেয়া উচিত।
শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আপনার ফুসফুস এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গের ক্ষতি করছে ধূমপান। এটি আপনাকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। সুস্বাস্থ্য এবং নিরাপদ জীবনের জন্য ধূমপান ছেড়ে দেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
এদিকে, গবেষকরা বলছেন, অতীতের সার্স ও চলমান করোনাভাইরাসের মতো মহামারিতে শিশুরা অপেক্ষাকৃত কম আক্রমণের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছেন বয়স্করা। এর সঠিক কারণ এখনও জানতে পারেননি গবেষকরা।
গবেষকরা এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে মনে করছেন, ধূমপান ও দূষণের কারণে এদের তরতাজা ফুসফুস এখনও সক্ষমতা হারায়নি। এবং এ বয়সে তাদের ডায়াবেটিস ও ক্রোনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিসেসের (সিওপিডি) মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস’স কিরবি ইনস্টিটিউটের বায়োসিকিউরিটি বিভাগের প্রধান রেইনা মকন্টায়ার। তিনি বলেন, ‘যাদের ফুসফুসজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এ ভাইরাস খুবই নির্দয়।’
শুধু ধূমপান নয়, যেসব দমকল কর্মী দীর্ঘদিন ধরে দাবানল নেভানোর কাজ করছেন (বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া), তাদের জন্যও দুঃসংবাদ দিচ্ছে এ ভাইরাস।
কিছুদিন আগে ব্যাপক দাবানলের মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া দাবানলে কয়েক মাস জ্বলেছে দেশটি। এতে অন্তত ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছে, মারা গেছে ৫০ কোটিরও বেশি প্রাণী। দাবানলের লেলিহান শিখায় ধ্বংস হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, পুড়ে ছাই হয়েছে লাখ লাখ একর জমির গাছপালা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল অস্ট্রেলিয়াকে রেইনা মকন্টায়ার বলেন, ‘যারা দাবানল নেভানোর সময় ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এখনও সুস্থ হননি, তাদের করোনাভাইরাসে অপেক্ষাকৃত বেশি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
‘যাদের এ ধরনের সমস্যা নেই এবং ধোঁয়ার কারণে সৃষ্ট রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। এ বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণাপত্র বা ডাটা নেই’- যোগ করেন অধ্যাপক রেইনা।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সনজয়া সেনানায়েক বলেন, ‘যদিও করোনাভাইরাস ও ধূমপানের মধ্য আমরা এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাইনি, তারপরও ধূমপান শরীরে অন্যান্য সমস্যা তৈরি এবং করোনা মোকাবিলায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের রোগসহ অন্যান্য রোগের কারণ ধূমপান। শরীরে এ ধরনের রোগ থাকলে করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।’
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত করা হয়। ডা. সেনানায়েক বলেন, ‘আমরা এখনও করোনাভাইরাসের সঙ্গে ধূমপানের যোগসূত্র খুঁজে পাইনি। তবে তার মানে এই নয় যে, ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে না।’ এ গবেষক পরামর্শ দিয়ে বলেন, ধূমপান ছেড়ে দেয়া সবসময়ের জন্যই মঙ্গল।
যারা ধূমপায়ী শুধু তারা নন, দাবানল নেভানোর কাজে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োজিত দমকল বাহিনীর সদস্যদেরও করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দাবানলের ধোঁয়ায় পিএম২.৫ এর মতো শত শত ক্ষতিকর উপাদান থাকে। এই পিএম২.৫ কণা আড়াই মাইক্রোমিটার আকারের চেয়েও ক্ষুদ্র-মানব চুলের প্রস্থের শতকরা ৩ ভাগেরও ছোট। অথচ এই ক্ষুদ্র কণাই ফুসফুসের গভীরে বাধা বাঁধে এবং সেগুলো ক্ষতি করে।
করোনাভাইরাসে সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৫১ হাজার ২৮ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২৪ হাজার ৯১৪ জন। বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৩৪০ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ২৯২ জনের।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২১৫ জনে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৫৮৯ জনে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইতালি সরকার।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এ ভাইরাসে ৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তাদের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন এবং সুস্থ হয়েছেন ১১ জন।
সূত্র : ডেইলি মেইল
এসআর/এসআইএস