জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন বেচাকেনা
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দিনে দিনে জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন বেচাকেনা। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে নিজের অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারি পেয়ে ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনলাইন কেনাকাটায়। কেনাকাটা করতে এখন আর যানজট ঠেলে দোকানে গিয়ে সময় অপচয় করতে হচ্ছে না। চাইলে যে কোনো পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে হাতে হাতে। কেনাকাটার জন্য বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে মানুষের।
অনলাইনে বেচাকেনার সাইটগুলোতে প্রায় সব ধরনের পণ্যই পাওয়া যায়। প্রতিটি সাইটেই আছে এলাকাভিত্তিক পণ্য বেচাকেনার সুবিধা। ক্রেতা-বিক্রেতার চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে উঠেছে অনলাইন বেচাকেনার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম। বাস, ট্রেন ও বিমানের টিকিটও এখন অনলাইনে কেনা যায়। জমি, ফ্ল্যাট, গাড়ি থেকে শুরু করে শাকসবজি, চাল-ডাল পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এসব ওয়েবপোর্টালে। জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে কেনাকাটার অনলাইন সাইটে (পোর্টাল) চলছে জমজমাট ব্যবসা।
নগদ টাকা দেয়ার পাশাপাশি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমেও অনলাইনে বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে। সম্প্রতি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকের মাধ্যমেও কেনাকাটার বিস্তার ঘটছে। ফেসবুকভিত্তিক বেশ কিছু দোকান বা ফ্যাশনহাউস গড়ে উঠেছে। ২৪ ঘণ্টা বা তার চেয়ে কম সময়ে নিজের অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারি পেয়ে ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনলাইন কেনাকাটায়।
পণ্য বুঝে পেয়ে মূল্য (ক্যাশ অন ডেলিভারি) পরিশোধের সুযোগ থাকায় অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেতাদের আগ্রহ আরও বেশি। নগরজীবনের ব্যস্ততায় একটু স্বস্তি দিয়েছে এই অনলাইন শপগুলো।
নিজের প্রয়োজনীয় এবং শৌখিন সামগ্রী অনলাইনে কেনাকাটা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হামিদা আক্তার। তিনি বলেন, অনলাইন কেনাকাটা আমার জীবনকে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করেছে। একটি জিনিস কিনতে আগে পুরো বিপণিবিতান ঘুরতে হতো। এতে অনেক সময় নষ্ট হতো। এখন খুব সহজেই আমার প্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে পারছি অনলাইনে।
আব্দুল্লাহ আল ওয়াদূত নামের একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা নিজের ব্যস্ততার জন্য অনলাইন শপ থেকেই প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, দোকান বা শপিংমলে গিয়ে যেভাবে পরখ করে পছন্দের পণ্যটি কেনা হয় ঠিক সেভাবে অনলাইন শপে ঢুকে ছবি এবং দাম দেখে অনলাইনেই কেনার অর্ডার দেয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, ডেলিভারির সময় হাতে অর্ডার দেয়া জিনিস পেয়ে যাচাই করে নেয়ারও সুযোগ রয়েছে। পছন্দসই জিনিস না পেলে অর্ডার বাতিলও করা যায়। তাই আমি এটাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
এদিকে অনলাইন শপগুলোর বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন তারা। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে অসংখ্য ফেসবুক শপ তৈরি হয়েছে। ঘরে বসেই এই ব্যবসা করেন উদ্যোক্তারা। ফেসবুকে মূলত ফ্যাশন হাউসই বেশি। অর্ডার দিলে উদ্যোক্তারা সেই পণ্যটি ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দেন।
পাইকারি ও খুচরা পোশাক বিক্রেতা দোকানি সেন্টু হাসান জানান, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে তাদের শোরুম রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে তারা অনলাইনের মাধ্যমে পোশাক বিক্রি শুরু করেছেন। এজন্য অনলাইন একটি ফেসবুক পেইজ খোলা হয়েছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে এটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। কেনাবেচার সাইটগুলোতে দেখা গেছে, অনলাইন বেচাকেনায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিশেষ করে মুঠোফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মডেম, পেনড্রাইভ ইত্যাদি।
অনলাইন শপ বা ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে বেচাকেনা প্রথমে ঢাকাকেন্দ্রিক থাকলেও এখন দেশের বড় বড় শহরের মানুষও ইন্টারনেটে কেনাকাটায় আগ্রহী হচ্ছেন। এসব অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে সুতি, জামদানি, মসলিন ও সিল্কের শাড়ি, মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক, কুমিল্লার খাদিসহ আকর্ষণীয় ডিজাইনের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, শার্ট, জিন্স প্যান্ট, আমদানি করা জুয়েলারি, ঘড়ি, চশমা, চামড়ার বেল্ট, ওয়ালেট, ঘর সাজানোর সামগ্রী, বিউটি কেয়ার প্রডাক্টসহ নানা সামগ্রী।
এএস/জেডএইচ/এমএস