করোনা প্রতিরোধে ‘অবাক অস্ত্র’ সাবান : বিজ্ঞানী
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের করোনাভাইরাস এখন বিশ্বের ৬০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে এ রোগ তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে বিশ্বজুড়ে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে গেছে।
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনো প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে সাবান। এজন্য তারা বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
নোবেল করোনাভাইরাসে সৃষ্ট কোভিড১৯ একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা দ্রুত এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে হাত মাধ্যম হিসেবে কাজ কাজ করতে পারে। এছাড়া করোনাভাইরাস এড়াতে আলিঙ্গন ও কোলাকুলির করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এর বিপরীতে তারা ‘হাই-হ্যালো’ বলতে বলছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টটিউট দ্য সেন্টারস ফর ডিজিসেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলেছে, করোনাভাইরাস এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে সংক্রমিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে ঘন ঘন হাত ধোয়া ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক ক্যারেন ফ্লেমিং। কয়েকটি সিরিজ টুইট করে তিনি বলেছেন, “সাবান একটি ‘আশ্চর্যজনক অস্ত্র’। এটি সবার বাড়িতেই থাকে এবং করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এ কার্যকর।”
“করোনাভাইরাস একধরনের ‘সুপ্ত’ ভাইরাস। এর বাইরের অংশ ‘লিপিড মেমব্রেন লেয়ার’ দিয়ে ঢাকা। অর্থাৎ এটি ফ্যাট লেয়ার দিয়ে আবৃত। বারবার সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া হলে এর চর্বিযুক্ত আবরণ উঠে যাবে এবং এর ফলে ভাইরাস মারা যাবে”-টুইটবার্তায় বলেন ফ্লেমিং।
কতক্ষণ ধরে হাত ধুতে হবে-এর উত্তরও দিয়েছেন এই বিজ্ঞানী। অপর টুইট বার্তায় তিনি বলেন, “আমাকে বলা হয়েছে ‘হ্যাপি বার্ডডে’ দুইবার বল। সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ধ্বংস করতে এই সময়টুকুই যথেষ্ট।”
ক্যারেন এই বিষয়ে টুইট করার পর মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও গবেষকরা বলেছেন, যদি বাসায় সাবান না থাকে তাহলে হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া উচিত। ওয়াশরুম ব্যবহারের পর ও খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে চীনে একদিনে আরও ৪২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ইতালিতে। দেশটিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় মারা গেছেন চারজন।
রোববার চীনে নতুন করে আরও ২০২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮০ হাজার ২৬ জনে। এ নিয়ে চীনে মোট মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৯১২ জনে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০০ জন। দেশটিতে আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ৪০০০ জনে। এছাড়া ইতালিতে এ পর্যন্ত মোট ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর এতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৯৪ জন।
দক্ষিণ কোরিয়ার মোট মৃতের সংখা দাঁড়িয়েছে ২২ জনে। সবমিলিয়ে করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের মোট সংখ্যা তিন হাজার ৫৩ জন।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইতালিতে। জাপানের প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৭০৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
ইরানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৬০০ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৪ জনের। জাপানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫০ এবং মৃত্যু ১২। সিঙ্গাপুরে এখন পর্যন্ত ১০২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ফ্রান্সে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ১০০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে দুইজনের।
হংকংয়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৯৫ এবং মৃত্যু ২। যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬২ এবং মৃতের সংখ্যা ১। জার্মানিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৫৭, স্পেনে ৪৬, কুয়েতে ৪৫, থাইল্যান্ডে ৪২, তাইওয়ানে আক্রান্ত ৩৯ এবং মৃত্যু ১। বাহরাইনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮, মালয়েশিয়ায় ২৫, অস্ট্রেলিয়ায় ২৪, যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ এবং মৃত্যু ১।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতে এখন পর্যন্ত ১৯ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ভিয়েতনামে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬, কানাডায় ১৪, ইরাকে ১৩, সুইডেনে ১৩, ম্যাকাউতে ১০, সুইজারল্যান্ডে ১০, লেবাননে ৭, ক্রোয়েশিয়ায় ৬, নেদারল্যান্ডসে ৬, নরওয়েতে ৬, ওমানে ৬, অস্ট্রিয়ায় ৫, ইসরায়েলে ৫, রাশিয়ায় ৫, গ্রিসে ৪, মেক্সিকোতে ৪, পাকিস্তানে ৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
অপরদিকে ফিলিপাইনে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ এবং মৃত্যু হয়েছে একজনের। ফিনল্যান্ডে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩, ভারতে ৩, রোমানিয়ায় ৩, ডেনমার্কে ২, জর্জিয়ায় ২, ইকুয়েডরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ১ এবং মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
আফগানিস্তানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১, আলজেরিয়ায় ১, আজারবাইজানে ১, বেলারুসে ১, বেলজিয়ামে ১, ব্রাজিলে ১, কম্বোডিয়ায় ১, মিসরে ১, এস্তোনিয়ায় ১, আইসল্যান্ডে ১, আয়ারল্যান্ডে ১, লিথুনিয়ায় ১, মোনাকোতে ১, নেপালে ১, নিউজিল্যান্ডে ১, উত্তর মেসিডোনিয়ায় ১, নাইজেরিয়ায় ১, কাতারে ১ এবং শ্রীলঙ্কায় একজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর এটি চীনের বেশ কিছু শহরে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।
সূত্র :ইন্ডিয়া টুডে
এসআর/পিআর