জনমানবহীন ‘ভুতুড়ে নগরী’ দিল্লির শিব বিহার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩৯ এএম, ০১ মার্চ ২০২০

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির একদম কাছেই শিব বিহার। গত সপ্তাহের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রীতিমতো ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে এলাকাটি। এদিক-ওদিক চোখে পড়ে আগুনে পোড়া বাড়িঘর, রাস্তায় দগ্ধ দোকানপাট, গাড়ি, মোটরসাইকেল। শুধু নেই মানুষজন। ঠিক যেন জনমানবহীন মৃত্যুপুরী।

দাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার একটি শিব বিহার। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘হাতের কাছে যা পেয়েছে, সব জ্বালিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতরা। প্রাণ বাঁচাতে অন্তত ১০০টি পরিবার ঘর ছেড়েছে। কিছু পরিবার পাশের ইন্দিরা বিহারে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানেও তাণ্ডব চালায় দাঙ্গাবাজরা। গুঁড়িয়ে দেয় অস্থায়ী আশ্রয় শিবির।’

দাঙ্গায় হামলার শিকান হন স্থানীয় মুমতাজ বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা। ৪০ বছর বয়সী এ নারী বলেন, ‘আমরা বাড়িতে ছিলাম, হঠাৎ দাঙ্গাবাজরা এসে অ্যাসিড ছুড়ে মারে। সামনে আমার স্বামী ছিল, অ্যাসিড তার মুখে গিয়ে পড়ে। বাবার পাশেই দাঁড়িয়েছিল আমাদের মেয়ে। অ্যাসিড তারও মুখে লাগে।’

মুমতাজ বলেন, ‘আমরা কোনোভাবে পালিয়ে একটা মসজিদে আশ্রয় নেই। সারারাত সেখানেই ছিলাম। যে পোশাকে বাড়ি ছেড়েছি, এখনও সেটাই পরে আছি। আমার ওড়নায় এখনও অ্যাসিডে পোড়া ছিদ্র আর রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে। আমরা ’১০০-তে (হেল্পলাইন) কল করেছিলাম, কিন্তু কেউই এগিয়ে আসেনি।’

Delhi-2

দাঙ্গার সময় জান বাঁচাতে ১৫ দিনের সন্তান কোলে নিয়ে ঘর ছেড়েছেন শাহবানো। সেদিনের দুঃসহ সময়ের বর্ণনায় ২৮ বছর বয়সী এ নারী বলেন, ‘দিনভর বাড়ির বাইরে সহিংসতা চলছিল। ঘরের সব আলো নিভিয়ে রেখেছিলাম, যেন দাঙ্গাবাজরা বুঝতে না পারে আমরা ভেতরে আছি। ভয় পাচ্ছিলাম, আমার বাচ্চাটা জেগে উঠতে পারে, আর তার কান্নার আওয়াজ শুনে ওরা আমাদের ওপর হামলা করতে পারে। তারা আমাদের পাশের বাড়িতে আগুন দিলে সবাই প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালাই। পরে আমাদের বাড়িতেও আগুন দেয়া হয়। জানি না এখন কী হবে। আমাদের তো কিছুই অবশিষ্ট নেই।’

গত রোববার থেকে কমপক্ষে চারদিন সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব চলেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪২ জন। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন দুই শতাধিক। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষকে।

সূত্র: এনডিটিভি

কেএএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।