অ্যান্টার্কটিকার বরফ হঠাৎ এত লাল কেন?
বরফের মহাদেশ হিসেবে পরিচিত অ্যান্টার্কটিকা। আর বরফ দেখতে সাদা-এটা সবাই জানে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু ছবি ঘিরে প্রশ্ন জেগেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লাল রঙের বরফ। দেখে মনে হবে যেন বরফে রক্তের ছোপ লেগে আছে।
‘অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের চাঞ্চল্যকর লাল বরফের ছবি। বরফাচ্ছাদিত মহাদেশটির পানি দিন দিন উষ্ণ হয়েই চলেছে। এই লাল রঙের বরফ নিঃসন্দেহে জলবায়ু পরিবর্তনের অশুভ চিহ্ন’-ক্যাপশন দিয়ে মাইক হুদেমা নামের এক ব্যক্তি টুইটারে বিরল এই ছবি শেয়ার করেছেন।
শুধু মাইক হুদেমাই নয়, ইউক্রেনের শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক মন্ত্রণালয় ফেসবুকে একই ধরনের বেশ কিছু ছবি শেয়ার করেছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই ধরনের বরফ দেখা যাচ্ছে অ্যান্টার্কটিকার গ্যালিন্ডেজ আইল্যান্ডে সাবেক ব্রিটিশ রিসার্চ স্টেশনের পাশে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘ক্ল্যামাইডোমোনাস নিভালিস’ নামে এক ধরনের আনুবীক্ষণিক শ্যাওলার কারণেই এই লাল রঙ দেখা যাচ্ছে বরফে।
জানা গেছে, প্রবল ঠাণ্ডাতেও বেঁচে থাকতে পারে এই শ্যাওলা। মূলত মেরু ও পার্বত্য অঞ্চলে এই শ্যাওলা দেখা যায়। এই শ্যাওলার ক্লোরোপ্লাস্টে রয়েছে ‘ক্যারোটিনয়েড’। আর তার জেরেই এই লাল রঙ হয়। ঠিক যে ‘ক্যারোটিনয়েড’-এর জন্য কুমড়ো বা গাজরের রঙ কমলা হয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে এ ধরনের শ্যাওলা দেখা যায়।
তবে এই লাল রঙের একটা খারাপ দিক আছে। এই ধরনের শ্যাওলা বেশি থাকলে বরফ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করতে পারে না। ফলে দ্রুত বরফ গলে যায়। তাই বলা যায়, উষ্ণায়নের পথ প্রশস্ত করে এই রক্ত-রঙের শ্যাওলা।
ইউক্রেনের শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, ‘এই ধরনের বরফ-পুষ্প (শ্যাওলা) জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। কেননা এর লাল রঙের কারণে বরফে অপেক্ষাকৃত কম সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত হতে পারে এবং বরফ গলে যায় বেশি। ফলশ্রুতিতে এ ধরনের শ্যাওলার উৎপাদন আরও বেড়ে যায়।’
মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘ক্ল্যামাইডোমোনাস নিভালিস শ্যাওলার কোষে লাল ক্যারোটিনের আবরণ রয়েছে এবং এটি সূর্যের আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মি থেকে কোষকে রক্ষা করে। আর এ কারণেই বরফে লাল রঙের স্পট পড়ে যায়। মূলত লাল রঙের কারণে বরফে কম সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত হচ্ছে এবং দ্রুত গলে যাচ্ছে।’
পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশটির প্রায় ৯৮ শতাংশই ঢেকে আছে বরফে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বের শীতলতম স্থান এই অ্যান্টার্কটিকায়। গলতে শুরু করেছে হাজার বছর ধরে জমে থাকা বরফের স্তর। সম্প্রতি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার প্রকাশিত কিছু ছবিতে দেখা গেছে, মাত্র নয়দিনের তাপপ্রবাহে আন্টার্কটিকার বরফের চাদর প্রায় ২০ শতাংশ গলে গেছে।
নাসা জানিয়েছে, মাত্র এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ের মধ্যেই ঈগল আইল্যান্ডের চূড়ার চার ইঞ্চি বরফের আস্তরণ গলে যায়।
ম্যাসাচুসেটসের নিকোলস কলেজের জিওলজিস্ট মৌরী পেলটো জানিয়েছেন, ‘অ্যান্টার্কটিকায় এত তাড়াতাড়ি গলে যাওয়া পুকুর কখনও এর আগে দেখা যায়নি। এভাবে বরফ গলে যাওয়ার দৃশ্য আলাস্কা ও গ্রিনল্যান্ডে দেখা গেলেও তা এর আগে কখনও অ্যান্টার্কটিকায় দেখা যায়নি।’
পরিবেশ বিজ্ঞানী জেভিয়ার ফেটউইসের মতে, এই গ্রীষ্মে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে এই তাপপ্রবাহ।
এদিকে অ্যান্টার্কটিকার ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে গত ৬ ফেব্রুয়ারি। সেখানে নিয়োজিত আর্জেন্টিনার গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, ওই দিন অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের সর্ব-উত্তরের প্রান্তে ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে, যা সেখানকার ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ২০১৫ সালে ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ওই অঞ্চলে।
এসআর/জেআইএম